দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (এমপি) হাজী মো. সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আদেশের পর তাকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে। 

রোববার (২২ মে) সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাজী সেলিমকে বহনকারী পুলিশ ভ্যান কারাগারের ভেতর প্রবেশ করে। পরে পুলিশ হাজী সেলিমকে কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। এর আগে বিকেল ৫টার পর হাজী সেলিমকে নিয়ে পুলিশের পিকআপ ভ্যানটি কারাগারের উদ্দেশে রওনা হয়।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কারা সূত্র জানায়, হাজী সেলিমকে বহনকারী পিকআপ ভ্যানের পেছনে পেছনে আলাদা গাড়িতে করে কারাগার পর্যন্ত আসেন তার ৩ ছেলে এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তারা গাড়ি নিয়ে কারাগারের বাইরে অবস্থান করেন।

আত্মসমর্পণের জন্য রোববার দুপুর ২টার দিকে তিন ছেলেকে নিয়ে হাজী সেলিম আদালত প্রাঙ্গণে আসেন। সেখানে আগে থেকে তার অনুসারীরা অপেক্ষা করছিলেন এবং নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর হাজী সেলিম প্রবেশ করেন আদালত ভবনে। 

বিকেল ৩টা ১০ মিনিটের দিকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন হাজী সেলিম। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলাম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

জামিন আবেদনে হাজী সেলিমের আইনজীবী শ্রী প্রাণ নাথ উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালে ওপেন হার্ট সার্জারির সময় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন যাবত বাক-শক্তিহীন অবস্থায় রয়েছেন হাজী সেলিম। তিনি দেশ ও বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। 

এতে আরও বলা হয়, জেলে থাকলে চিকিৎসার অভাবে ও বাক-শক্তি না থাকায় যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ কারণে যে কোনো শর্তে তার জামিন আবেদন করছি। জামিন পেলে তিনি পলাতক হবেন না। তাই আপিল শর্তে আত্মসমর্পণ পূর্বক তার জামিন আবেদন করছি।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছর কারাদণ্ড বহালের রায়ের নথি হাইকোর্ট থেকে গত ২৫ এপ্রিল নিম্ন আদালতে পাঠানো হয়।

দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান ওই দিন বলেছিলেন, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ২৫ এপ্রিল থেকে ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই আত্মসমর্পণ করলেন হাজী সেলিম।

২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে দুই ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।

২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তার সাজা বাতিল করেন।

পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের আগের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টেই শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

২০২১ সালের ৯ মার্চ বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রায় প্রকাশ করা হয়।  

এআর/জেডএস