প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, বিচার বিভাগের অধিকাংশ বিচারক-কর্মকর্তাই সৎ, তবে হাতে গোনা কয়েকজন রয়েছেন যারা অসৎ। এই অসৎ কর্মকর্তাদের কারণে যদি বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তাদের বিষয়ে কোনো আপস হবে না। তবে সৎ কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করা হবে।

শনিবার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি প্রধান বিচারপতি হয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছি, আমাদের দেশে অধিকাংশ জুডিশিয়াল কর্মকর্তাই সৎ, মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন অসৎ কর্মকর্তার জন্য জন্য জুডিশিয়ারি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে তাদের শনাক্ত করব। আর তাদের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপোষ থাকবে না।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমি একটি কমিটি করে দিয়েছি। যারা ভালো করবে তাদেরকে প্রত্যেক বছর ‘প্রধান বিচারপতি’ পদক দেওয়া হবে। এজন্য একটা নীতিমালা করা হয়েছে।

বিচারকদের বদলি এবং পদায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচারকদের পোস্টিংয়ের জন্য সিনিয়রিটি এবং যোগ্যতা দেখে পোস্টিং দেব, এই ক্ষেত্রেও আমরা কোনো কমপ্রোমাইজ করব না। জুডিশিয়ারি সঠিক পথে চলছে এবং চলবে।

তিনি আরও বলেন, একইভাবে পদায়নের জন্য কোনো সিনিয়রিটি ব্রেক করব না। সিনিয়র কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ বা অসততা না থাকে তাহলে আমরা সিরিয়াল ব্রেক করব না। বিশেষ করে আমি যে কয়দিন আছি, এটা মেনের চলার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

প্রধান বিচারপতি বলেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন হয়। বিচারকদের লক্ষ্য হবে জনগণের আস্থা অর্জন করা। বিচারপ্রার্থী মানুষকে যাতে দিনের পর দিন আদালতের বারান্দায় ঘুরতে না হয়।

তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ বিচারপ্রার্থী হয় জমি বন্ধক রেখে, না হয় হালের গরু বিক্রি করে অথবা গোলার ধান বিক্রি করে আইনজীবীকে টাকা দেন। এখন এসব বিচারপ্রার্থী জনগণ যদি দিনে পর দিন আদালতে ঘুরতে থাকেন তাহলে তারা নিঃস্ব হয়ে যাবেন। এদেরকে যত দ্রুত মুক্তি দেওয়া যায় ততই ভালো, তাদের জন্য এবং জাতির জন্য।

মামলার জট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি থাকে তাহলে আমরা মামলার জট থেকে উত্তরণ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আসিনুল হক। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের নারীদের সংখ্যাই শুধু বাড়েনি। তারা সেখানে মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।

মন্ত্রী বলেন, মামলা জট কমানো এবং বিচারপ্রার্থী মানুষকে অল্প সময়ে ন্যায় বিচার দিতে পারলে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আমরা অনেকটা এগিয়ে যাব। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।

বিচারকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, হয়রানিমূলক মামলা কমিয়ে মানুষকে বিচারিক সেবা নিশ্চিত করা আপনাদের দায়িত্ব। এই ক্ষেত্রে দেওয়ানি মামলায় যেহেতু দীর্ঘ সময় লেগে যায়, সেটা কিভাবে এক দেড় বছরে শেষ করা যায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমার মনে হয়, কোড অব প্রসিডিউর যদি সঠিকভাবে অনুসরণ করি তাহলে এটা করা সম্ভব।

মামলার জট প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সিআর মামলা হওয়ার পরে কতগুলো মামলা তদন্ত পর্যায়ে আছে সেগুলো আমরা পৃথক করতে পারি। তাহলেও দেখা যাবে মামলা সংখ্যা কমে যাবে। এছাড়া হাইকোর্টেও অনেক মামলা আছে যেখানে রুল অকার্যকর হয়ে আছে। অথচ বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার সংখ্যা হিসেবে দেখাচ্ছে। এসব মামলা যদি ঝেড়ে ফেলে দেওয়া যায় তাহলে এখন যে ৩৯ লাখ মামলার সংখ্যা দেখাচ্ছে তার থেকে অনেক কমে যাবে।

মামলার জট কমাতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সহজী করণ করা, ই-জুডিশিয়ারি করা, সাক্ষ্য আইন সংশোধন করাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারক হোসনে আরা বেগমের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, আপিল বিভাগের বর্তমান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, এম ইনায়েতুর রহিম, আইন সচিব গোলাম সারওয়ার ও সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্টার জেনারেল বজলুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এমএইচডি/আইএসএইচ