বিচার হয়তো হবে, আমি দেখে যেতে পারব না
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার নয় বছর পার হলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের কূলকিনারা করতে পারেনি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আদালত থেকে দফায় দফায় সময় বেঁধে দেওয়ায় পরও হত্যার রহস্য উদঘাটন করে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি পুলিশের এই এলিট ফোর্স। গত নয় বছরে আদালত থেকে ৭৮ বার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু ‘র্যাব-পুলিশ চাইলে সব পারে’— নৃশংস ওই জোড়া খুনের ঘটনায় হত্যাকারীদের খুঁজে বের করার বেলায় তা খাটেনি। এ নিয়ে সাংবাদিক দম্পতির পরিবারের মধ্যে সুষ্ঠু বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আমার আবেদন, মুজিববর্ষে সাগর-রুনি হত্যা মামলার বিচার যেন শুরু হয়। তাহলে অনেক বড় একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে
সাগর সারওয়ারের মা সালেহা মনির
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ছেলে ও বৌমার (সাগর-রুনি) হত্যার বিচার নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় মা সালেহা মনিরের। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সব হত্যার বিচার হচ্ছে। কিন্তু সাগর-রুনি হত্যার বিচার হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না, সেটা আমরা বুঝতেছি না। তবে, আশা করি একদিন বিচার হবে। হয়তো আমি দেখব না। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার যেহেতু হয়েছে, সাগর-রুনি হত্যারও বিচার একদিন হবে।’
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়
তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় আদালতের কাছে আমার একটা অনুরোধ, আদালত যেন মামলাটির বিচারের জন্য একটা সময় নির্ধারণ করে দেয়। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আমার আবেদন, মুজিববর্ষে সাগর-রুনি হত্যা মামলার বিচার যেন শুরু হয়। তাহলে অনেক বড় একটা মাইলফলক তৈরি হবে।’
মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে বাদী ও রুনির ভাই নওশের আলম রোমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘তদন্ত…, আর কী হবে? এখন তো তদন্ত হচ্ছে না। ইচ্ছা করেই সবকিছু ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। তারপরও আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
সাগর-রুনির ছেলে মেঘ সম্পর্কে তার মামা নওশের আলম বলেন, ‘মেঘ বেশ ভালো আছে। এখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সে একটি টিমে নিয়মিত খেলে। মা-বাবার কথা এখনও তার মনে পড়ে। তাদের খুব ফিল করে।’
আর কী হবে? এখন তো তদন্ত হচ্ছে না। ইচ্ছা করেই সবকিছু ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। তারপরও আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই
মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলম রোমান
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে নৃশংস ওই জোড়া খুনের পর রুনির ভাই নওশের আলম রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক মো. জহুরুল ইসলাম। ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম নতুন করে তদন্তভার নেন। এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ১৮ এপ্রিল তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন র্যাবের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান।
সর্বশেষ গত ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় পরবর্তী তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য আগামী ১১ মার্চ দিন ধার্য করা হয়।
এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন- মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মামুন, মো. কামরুল হাসান অরুণ, বকুল মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আবু সাঈদ, এনাম আহাম্মদ ওরফে হুমায়ুন কবির, পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান।
আসামিদের মধ্যে পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান জামিনে আছেন। বাকিরা কারাগারে আছেন।
টিএইচ/এমএআর/