স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের হাতের লেখার নমুনা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদেশের পর বিচারকের খাস কামরায় বাবুল আক্তারের হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

মঙ্গলবার (২২ মার্চ) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আব্দুল হালিমের আদালত এই নির্দেশ দিয়েছেন।   হাতের লেখার নমুনা এখন পরীক্ষা করবে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাবুল আক্তারের আইনজীবী এ. কে. এম আজহারুল হক। তিনি বলেন, বাবুলের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তার (বাবুল) হাতের লেখা পরীক্ষার জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন। আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। পাশাপাশি আজ পিবিআই এর উপস্থিতিতে বিচারকের খাস কামরায় বাবুল আক্তারের হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এগুলো এখন ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে। আদালতের পরবর্তী আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কত পৃষ্ঠার লেখা নমুনা নেওয়া হয়েছে তা জানেন না বলে দাবি করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তার কারণে বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কারাগারে না রেখে পুনরায় ফেনী কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেছি। আদালত এই বিষয়ে পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন। 

এর আগে বাবুলের হাতের লেখা পরীক্ষার জন্য পিবিআই ১৪ মার্চ আদালতে আবেদন করে। মঙ্গলবার তার উপস্থিতিতে সেটি নেওয়ার তারিখ ধার্য করেছিলেন আদালত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, মাহমুদা হত্যা মামলায় আলামত হিসেবে জব্দ করা জিনিসপত্রের মধ্যে একটি বই আছে। বইটি এক নারীর কাছ থেকে বাবুল উপহার পেয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। বইয়ের তৃতীয় পাতায় একজনের হাতে লেখা কিছু বিবরণ পাওয়া গেছে। একই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠার (২৭৬) পরের পাতায় আরেকজনের হাতে লেখা কিছু বিবরণ দেখা গেছে। বিবরণ দুটি ইংরেজিতে লেখা। তবে তা পৃথক ব্যক্তির লেখা। বাবুলের সম্পর্ক নিয়ে এ লেখা সন্দেহ বাড়াচ্ছে। এতে পরিচয়, সাক্ষাৎসহ নানা বিষয় আছে।

তিনি বলেন, বইয়ের তৃতীয় পাতায় থাকা হাতের লেখা এক নারীর বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আর বইয়ের শেষ পৃষ্ঠার পরের পাতায় থাকা লেখা বাবুলের বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এখানে বাবুলের হাতের লেখা আছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য তার হাতের লেখার নমুনা আজ আদালতের নির্দেশের পর সংগ্রহ করা হয়েছে। নমুনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বইয়ের লেখার সঙ্গে বাবুলের হাতের লেখার মিল আছে কি না, তা যাচাই করা হবে।

গত বছরের মে মাসে মাহমুদার বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলার এজাহারে এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বাবুল তার স্ত্রী মাহমুদাকে খুন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। 

যদিও ২৫ জানুয়ারি মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় তার বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে পিবিআই। পিবিআই জানায়, একই ঘটনায় বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্ত এগিয়ে নিতে মিতুর বাবা মোশাররফের মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। একই ঘটনায় দুটি মামলা চলতে পারে না। সম্প্রতি আদালত এটিকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করেন। তাই আদালতের পর্যবেক্ষণ মেনে ও বিধিবিধান অনুসারে মিতুর বাবার দায়ের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাবুলের করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলবে।

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তার ও মিতুর বাবা বাদী হয়ে পৃথক সময়ে দুটি মামলা করেন পাঁচলাইশ থানায়।  মামলাগুলো তদন্ত করছেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক। এর মধ্যে বাবুল আক্তারের করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলছে। অধিকতর তদন্ত চলাকালে আদালতের আদেশে ৯ জানুয়ারি বাবুল আক্তারকে নিজের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তার যে মামলাটি দায়ের করেছিলেন, সেটির তদন্ত শেষ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পিবিআই। কিন্তু আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন না নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। মিতুর বাবার করা মামলাটিও তদন্ত করছে পিবিআই। 

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম (মিতু)। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। এক পর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধেই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পরে ১২ মে বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। রিমান্ড শেষে প্রথমে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও পরে জবানবন্দি দেননি বাবুল। 

কেএম/জেডএস