শ্রমিক নেতা হত্যা মামলা
কীভাবে এত বড় দুঃসাহস দেখালেন, তদন্ত কর্মকর্তাকে হাইকোর্ট
রাজশাহীর পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে আবারও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। তদন্ত কর্মকর্তার উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, উচ্চ আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ছিল কীভাবে এ মামলার তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশনা অমান্য করে বাদীর এজাহারকে আমলে না নিয়ে নিজেদের তৈরি করা এজাহারের ভিত্তিতে আপনি মনগড়া তদন্ত সম্পন্ন করেছেন। কীভাবে এত বড় দুঃসাহস দেখালেন?
রোববার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
বিজ্ঞাপন
মামলার মূল এজাহার আমলে না নিয়ে তদন্ত সম্পন্ন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের মো. শামীম আক্তার। বাদীর মূল এজাহারকে বাদ দিয়ে স্পর্শকাতর এ মামলার তদন্ত সম্পন্ন করার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা দিতে না পারায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
এর আগে হাইকোর্টের তলব আদেশে হাজিরা দেন তদন্ত কর্মকর্তা শামীম আক্তার। তার পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান আদালতে বলেন, এটা অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়েছে। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, আপনি তো হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছেন। আপনি যেভাবে তদন্ত করেছেন তাতে আসামিদের সাহায্য করে মামলার বাদীকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। যেখানে হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে সেটাকে লঙ্ঘন করে আপনি মনগড়া তদন্ত করেছেন। কেন এত বড় দুঃসাহস দেখিয়েছেন?
পুঠিয়ার সড়ক ও পরিবহন মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন নুরুল ইসলাম। নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বীরা ২০১৯ সালের ১০ জুন তাকে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে নিগার সুলতানা আটজনের নাম উল্লেখ করে পুঠিয়া থানায় এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু সেই এজাহারটি লিপিবদ্ধ না করে ওই থানার তৎকালীন ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদ ছিঁড়ে ফেলেন। পরে সাদা কাগজে বাদীর সই রেখে নিজেরাই একটা এজাহার সৃজন করে তা থানায় লিপিবদ্ধ করেন। যা পরবর্তীকালে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিচারিক অনুসন্ধান কমিটির তদন্তে বেরিয়ে আসে। একইসঙ্গে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন্সকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন।
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, আদালত প্রত্যাশা করে যে, পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার মামলাটি তদন্ত তদারকিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবেন। বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা/সংস্থাকে অবিলম্বে কেস ডকেট পিবিআইয়ের নিকট হস্তান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হলো। পিবিআইকে তদন্তকালে সংবাদদাতার মূল এজাহারের বর্ণনা, রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অনুসন্ধান রিপোর্ট ও উক্ত অনুসন্ধান কার্যক্রমে সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিবেচনায় গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
কিন্তু হাইকোর্টের এই নির্দেশনা না মেনেই তদন্ত সম্পন্ন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের শামীম আক্তার। এই মামলার আসামি আবুল কালাম ওরফে আবু জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। ওই জামিন আবেদনের শুনানিকালে হাইকোর্ট নির্দেশনা না মেনে তদন্ত করার বিষয়টি দেখতে পান। এরপরই তদন্ত কর্মকর্তাকে তলবের পাশাপাশি এ বিষয়ে তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
এমএইচডি/এসকেডি