বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে কাজ করতে চাই: প্রিসিলা
ফাতেমা নাজনীন প্রিসিলা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ পরিচিত মুখ। পড়াশোনার পাশাপাশি সচেতনতামূলক ভিডিও বানিয়ে এরমধ্যেই আলোচনায় এসেছেন। দাঁড়িয়েছেন অবহেলিত মানুষের পাশে। কাজ করতে চান বাংলাদেশিদের নিয়েও। সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের সঙ্গে। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রবিউল ইসলাম জীবন
ঢাকা পোস্ট : অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ থেকেই নিউইয়র্ক ফিল্ম একাডেমিতে অভিনয় ও মডেলিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। নিউইয়র্কের বিখ্যাত ব্রডওয়ে শোতেও কাজ পান। সব কিছু বাদ দিয়ে শুরু করলেন সামাজিক কাজ। হঠাৎ এমন পরিবর্তন কেন?
বিজ্ঞাপন
প্রিসিলা ফাতেমা : একসময়ে অভিনয়, মডেলিং, নাচ ও গান শিখেছিলাম। অভিনয় ও মডেলিং বিষয়ে কোর্স করেছি নিউইয়র্ক ফিল্ম একাডেমি থেকে। গান ও নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম স্কুলে। গান গেয়ে নিউইয়র্কে পুরস্কারও পেয়েছিলাম। এছাড়াও ব্রডওয়ে শোতে পারফর্মের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। তবে হঠাৎ একটি বিষয় আমার নজরে আসে। নিউইয়র্কের রাস্তায় ক্ষুধার্তদের গার্বেজের ময়লা থেকে খাবার খুঁজে খাওয়া আর বরফ জমা ঠাণ্ডার মধ্যে মানুষের রাস্তায় রাত কাটানো দেখে আমার মনে হয়েছে- অভিনয়, নাচ, গানের জন্য অনেকেই আছেন। কিন্তু সমাজের এই অবহেলিত, বঞ্চিতদের জন্য কথা বলা বা পাশে দাঁড়ানোর মানুষের সংখ্যা কম। বিষয়টি আমাকে কষ্ট দেয়। সেই থেকেই চেষ্টা করছি, তাদের জন্য কিছু করার। আমার মতো অনেকেই এ কাজ করছেন। তাছাড়া মাদার তেরেসা ও প্রিন্সেস ডায়নাও কিছু কাজ , কিছু গল্প আমায় অনুপ্রাণিত করে। তাই অভিনয় করছি না। ভবিষ্যতে হয়তো করতে পারি।
ঢাকা পোস্ট : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনি বেশ সরব। বিশেষ করে ফেসবুক ও ইউটিউবে সচেতনতামূলক ভিডিও প্রকাশ করছেন। করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের মানুষকে সচেতন করতে কাজ করেছেন। এতে আপনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন অনেকেই। কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
প্রিসিলা ফাতেমা : আমি অনেক ভাগ্যবান। অনেক সেলেব্রিটি, ডাক্তার, আইনজীবী কোনো টাকা পয়সা ছাড়াই তাদের ব্যস্ত সময় আমার দর্শকদের জন্য দিয়েছেন। বিশেষ করে আসিফ আকবর, ড. আসিফ নজরুল, আরজে কিবরিয়া, আয়মান সাদিক, ব্যারিস্টার সুমন, ডেসকো ও পল্লী বিদ্যুতের সচিব, জাহিদ সবুর, জেসিকা কক্স, সুশান্ত পাল, ইথুন বাবু, মুনিরা মিঠু, লিজা, বেগম সালমা আসিফ, কর্নিয়া, ডলি শায়ন্তনী, তরুণ মুন্সী, জোবায়ের ও ফ্লোরিনা, শাহওয়ার ও মারিয়া, হাবিব ও নাটালিয়া, ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবির, ব্যারিস্টার নিষাদ খুসবু, কাদের মির্জা, নুরুল হক নুর, সিজদা, ফাতিহা আয়াত, জিয়াউল হক পলাশ, ডাক্তার লিলিয়ান রেজা, মানবিক পুলিশ সৈকত, সাংবাদিক মঞ্জুরুল করিম, এটর্নি মঈন খান, ডাক্তার চৌধুরী হাসানসহ অনেকেই। এগুলো আমি খুব উপভোগ করেছি। নিয়মিত তাদের কাছে শিখছি। তাদের সহযোগিতায় সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করা আমার পক্ষে আরও সহজ হয়েছে।
ঢাকা পোস্ট : আপনার লেখা, পরিচালনা ও প্রযোজনায় নাটক প্রচারিত হয়েছে। সেখানে ফজলুর রহমান বাবুর মতো স্বনামধন্য অভিনেতাও কাজ করেছেন। নাটকটি ২৫ মিলিয়ন হিট হয়েছে। তাছাড়া আপনি গজলও গেয়ে থাকেন। ট্রল আর নেতিবাচক সমালোচনার যুগে আপনাকে সবাই ইতিবাচক ভাবে গ্রহণ করেছে। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
প্রিসিলা ফাতেমা : কল্পনাও করিনি আমার লেখা নাটক মানুষ দেখবে। নাটকটি দেখার পর অনেকেই ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ কমেন্টে লিখেছেন, নাটক দেখে কেঁদেছি। কোন নেতিবাচক কমেন্ট নেই। এটা দেখার পর এখন ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে আরও নাটক লেখার। গান শিখেছিলাম। সে অভিজ্ঞতাটা গজলে কাজে লাগাচ্ছি। মানুষের ভালোবাসায় কাজ করতে আরও উৎসাহ পাচ্ছি। কতটুকু ভালো কাজ করতে পারছি এটা বুঝতে না পারলেও মানুষ যে মিডিয়াতে খারাপ কিছু গ্রহণ করে না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। আমি বিশ্বাস করি, ভালো কাজ করলে মানুষের সাপোর্ট পাবই।
ঢাকা পোস্ট : বেশ কয়েকটি ভিডিওতে বলেছেন, বাংলাদেশে ভবিষ্যতে কাজ করতে চান...
প্রিসিলা ফাতেমা : বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে কাজ করতে চাই। ইতিমধ্যে অনেকগুলো কাজ শেষ করেছি। এ ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাকে হেল্প করছেন। পড়াশোনা শেষ হলে অনেক সময় পাব। তখন আরও বেশি কাজ করতে পারব। খাবার, পানি, কাপড়, শিক্ষা, পরিচ্ছন্নতা ও মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করতে চাই।
ঢাকা পোস্ট : আপনি নাকি নিজের বাবাকে চিনেন না, এটা নিয়ে কিছু নেতিবাচক মন্তব্য চোখে চোখে পড়েছে। বিষয়টি যদি ব্যাখ্যা করতেন।
প্রিসিলা ফাতেমা : আমি বাবা মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এসেছি। তারা আমার সঙ্গেই থাকেন। আমি কয়েকটা ভিডিও তৈরি করেছিলাম অন্য মানুষের জীবন কাহিনী অবলম্বনে। বিষয়গুলোতে অভিনয় করতে গিয়ে আমি কান্না ধরে রাখতে পারিনি। পারেননি দর্শকরাও। সে ভিডিওগুলো দেখে সবাই ভাবছেন আমার বাবা নেই। আসলে বিষয়টি সঠিক নয়। গল্পগুলো ছিল অন্য মানুষের। আমার জীবনের নয়।
ঢাকা পোস্ট : বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে জানতে চাই-
প্রিসিলা ফাতেমা : আগামী বছর কলেজ বা ভার্সিটিতে যাবো। এ নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। ইচ্ছে আছে সাংবাদিকতা ও রাজনীতি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার। আইন নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছেও আছে।
ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আপনার ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছে। তাদের জন্য কিছু বলতে চান?
প্রিসিলা ফাতেমা : আমার কোনো ভক্ত নেই। যারা আমাকে পছন্দ করেন সবাই মনে করেন আমি তাদের ছোট বোন। কেউ কেউ আমায় আম্মু বলেও ডাকেন। আমিও তাই মনে করি। আমি কখনো ভাবিনি মানুষ আমায় এতটা পছন্দ করবেন। দেশের বাইরে ভারতের কিছু ভাই আছেন যারা নিয়মিত আমার প্রোগ্রাম দেখেন। প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনেক ভালোবাসেন আমাকে। দেশের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার প্রোগ্রাম দেখেন, সমর্থন করেন ও পরামর্শ দেন।