ঝামেলা ছাড়াই সার্টিফিকেট সংশোধনের উপায়
শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ বা সার্টিফিকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাকরি-বাকরিতো বটেই, বিদেশ যাওয়া থেকে শুরু করে যেকোনো কাজে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের প্রয়োজন পড়ে। এতে সামান্য একটি ভুল, আপনাকে ভোগাতে পারে দীর্ঘদিন। এরপরেও কখনো কখনো সার্টিফিটে ভুল থেকে যায়। সে ভুল সংশোধন করার জন্য কেউ কেউ আবার দালাল বা থার্ড পার্টি ধরেন। কিন্তু এদের পেছনে ঘুরে ঘুরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও কাজের কাজ কিছুই হয়না। উল্টো খোয়া যায় টাকা পয়সা। তাহলে উপায়? উপায় আছে। সে তথ্য বাতলে দিতেই আজকের আয়োজন-
অনলাইন ও অফলাইন দুইভাবে সার্টিফিকেট সংশোধন করা যায়। তবে ঝামেলা এড়াতে অনলাইনে সংশোধন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
বিজ্ঞাপন
প্রথমেই যা করতে হবে
সার্টিফিকেটের নাম বা জন্মতারিখের ভুল সংশোধনের জন্য নোটারি বা এফিডেভিট করাতে হবে। এটি করাতে হবে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে। এক্ষেত্রে প্রার্থীর নিজের বয়স ১৮ বছরের বেশি হলে তিনি নিজেই এফিডেভিট করতে পারবেন। তবে ১৮ বছরের কম হলে বা প্রার্থী যদি তার মা-বাবার নাম সংশোধন করতে চান তাহলে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রার্থীর বাবা কর্তৃক প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের কাছ থেকে এফিডেভিট করাতে হবে।
পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
এফিডেভিট সম্পন্ন হলে একটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর সার্টিফিকেট নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, শাখা, পরীক্ষার সাল, পরীক্ষাকেন্দ্রের নাম, রোল নম্বর, বোর্ডের নাম এবং জন্মতারিখ উল্লেখ করে যা সংশোধন করতে চান তা সংক্ষেপে উল্লেখ করতে হবে।
যেতে হবে সংশ্লিষ্ট স্কুল কলেজে
নোটারি ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ সম্পন্ন হলে যেতে হবে সংশ্লিষ্ট স্কুল বা কলেজে। সঙ্গে পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি ও নোটারির কপিসহ ন্যাশনাল আইডি কার্ড/জন্ম সনদ নিতে হবে। কাগজগুলো একটি আবেদনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্কুল বা কলেজের প্রধানের কাছে জমা দিতে হবে। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ কলেজের EIIN ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে শিক্ষাবোর্ডে আপনার ডকুমেন্ট স্ক্যান করে সংশোধনের আবেদন করবেন। আবেদন শেষে আপনার ফোনে একটি মেসেজ আসবে। এরপর সোনালী ব্যাংকে আবেদন ফি বাবদ ৫৫৮ টাকা জমা দিতে হবে। ফি প্রদানের রশিদ অবশ্যই যত্ন করে রাখতে হবে। আবেদন ফি জমা করার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আলাদা একটা প্রোফাইল ক্রিয়েট হবে। সেখানে লগ ইন করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই সর্বশেষ অবস্থা জানা যাবে।
কত সময় লাগবে?
আবেদন ফি জমা দেওয়ার পর কমপক্ষে তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আপনার ফোনে মেসেজ আসবে। তখন আপনাকে দেওয়া পাসওয়ার্ড দিয়ে প্রোফাইলে লগ ইন করবেন। সেখানে নতুন একটা অপশন আসবে ‘ডকুমেন্ট উত্তোলন’। সেই অপশনে গিয়ে ডকুমেন্ট উত্তোলনের আবেদন করবেন। এবার কলেজে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ এখন সাইটে পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করতে পারবেন। সেখানে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে যে ডকুমেন্ট উত্তোলন করতে চান সেটার জন্য নির্দেশ দিতে পারবেন।
এরপর ডকুমেন্ট উত্তোলন করার জন্য আগের মতোই সোনালি ব্যাংকে ৫৫৮ টাকা জমা দিতে হবে।
ডকুমেন্ট উত্তোলন ফি জমার দেওয়ার এক সপ্তাহ পর ফোনে ম্যাসেজ পাবনে ডকুমেন্ট রেডি হওয়ার। তখন প্রোফাইলে লগ ইন করে ডকুমেন্ট ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে হবে। এরপর শিক্ষা বোর্ডে মূল সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। এরপর আবার অফিসে গিয়ে চূড়ান্ত ডকুমেন্টস ও ব্যাংকে জমা দেওয়ার রশিদের মুল কপি জমা দিয়ে বুঝে নিন নতুন সংশোধিত সার্টিফিকেট।
খরচ কেমন পড়বে
এ প্রক্রিয়া সংশোধিত সার্টিফিকেট পেতে হাজার তিনেক টাকার মতো গুনতে হবে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ৫০০ টাকা, নোটারি পাবলিক ৫০০ টাকা ও দুইবারের ফি বাবদ ১১১৬ টাকা জমা দিতে হবে।