অনেক প্রত্যাশার পারদ গলিয়ে অবশেষে এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ। ছাত্র জীবন থেকেই অনেকের লক্ষ্যই থাকে এভিয়েশন মার্কেটে জব করা। কিন্তু লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য থাকলেই যে পূরণ হয়ে যাবে ব্যাপারটা সেরকম নয়। সারা বিশ্বের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে যেভাবে জব অপরচুনিটি তৈরি হয়েছে, বাংলাদেশে সেইভাবে তৈরি হয়নি। কারণ হিসেবে দেখা যায় জাতীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে একটা নির্দিষ্ট হিসাব নিকাশের মধ্য থেকেই চাকরি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। সেখানে প্রাইভেট এয়ারলাইন্সগুলোতে জব পাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয় অনেকটা সহজ পদ্ধতিতে।

সময়ের পরিক্রমায় দেখা যায় বাংলাদেশে প্রাইভেট এয়ারলাইন্সের স্থায়িত্বকাল খুব বেশী নয়। এখানে অনিশ্চয়তাও রয়েছে। বিগত  পঁচিশ বছরে সাত থেকে আটটি এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি সময় অপারেশনে ছিল জিএমজি এয়ারলাইন্স যার সময়কাল ছিলো চৌদ্দ বছর। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ এর সময়কাল প্রায় দশ বছর। দশ কিংবা চৌদ্দ বছর ফ্লাইট পরিচালনার পর যখন কোনো একটি এয়ারলাইন্স অপারেশন বন্ধ করে দেয় তখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই সব এয়ারলাইন্স এর কর্মীবাহিনী। অনিশ্চয়তার দোলাচলে চলতে থাকে সবাই।

এই অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকেও কিছু সংখ্যক কর্মীকে কখনই জব নিয়ে অস্থিরতার মধ্যে কাটাতে দেখা যায়নি। এর কারণ হিসেবে দেখা যায় যে যেই পজিশনে কিংবা ডিপার্টমেন্টেই কাজ করুক না কেনো, তিনি তার দায়িত্বের প্রতি খুব বেশি সচেতন ছিলেন। নিজেকে এভিয়েশনের জব মার্কেটে একটা ডিমান্ড তৈরি করে রাখেন। শুধুমাত্র তার নিষ্ঠা আর কর্মদক্ষতা দিয়ে অবস্থান তৈরি করেন। তিনি সব সময় নিজেকে দেশীয় এয়ারলাইন্সসহ বিদেশী এয়ারলাইন্সের কাছে একজন দক্ষ কর্মী হিসেবে তুলে ধরেন। জবের পিছনে আপনি নন, জব আপনাকে খুঁজবে- এভাবে নিজেকে তুলে ধরতে হবে।

এই লেখার হেডলাইনটা একটু ভিন্নতায় ভরা। এখানে এভিয়েশনকে উদাহরণ হিসেবেই ধরা হয়েছে। একটি এয়ারলাইন্স যখন অপারেশনে থাকে তখন কমপক্ষে ২০টি ডিপার্টমেন্ট থাকে আবার ডিপার্টমেন্টে বিভিন্ন পজিশনে কর্মীবাহিনী কাজ করেন। অনেক প্রত্যাশা আর প্রতিযোগিতা শেষে যখন কেউ কোনো বিভাগে যোগ দেন তখন প্রাথমিকভাবে অনেকটা সফলতা দেখান। এই সফলতার চূড়ান্ত ফল আসবে যখন সরাসরি কাজে যোগ দিবেন এবং নির্দিষ্ট এয়ারলাইন্স বা এয়ারলাইন্স ইন্ডাস্ট্রিকে ওউন (নিজের মনে) করবে। আপনার যোগদান হতে পারে কেবিন ক্রু, সেলস এন্ড মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ, কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভ, রিজার্ভেশন অফিসার, সিকিউরিটি, লোডার কিংবা যেকোনো ডিপার্টমেন্টে।

সব বিভাগেই এন্ট্রি লেবেলে যখন কেউ যোগ দেন তখন তার প্রচণ্ড আগ্রহ থাকে, কখন কিংবা কবে নাগাদ কাজে যোগদান করবেন। নির্দিষ্ট দিনে কিছু নিয়মকানুন শেষ করে যোগদান। এই যোগদান একজন কর্মীর কাছে গতকাল আর আজকের মধ্যে নিয়ে আসে আকাশ পাতাল পার্থক্য। সেই পার্থক্যে থাকে পরিচয় পর্ব। গতকাল ছিলেন অন্য কোনো পেশায় বা বেকার আর আজ নির্দিষ্ট এয়ারলাইন্স এর একজন কর্মী। এই দু’টো দিনের মধ্যে শুধুমাত্র দিনের পার্থক্য নয় আপনার কাজকর্মে, আলাপচারিতা কিংবা প্রতিউত্তরেও আপনার পরিবর্তন দৃশ্যমান হতে হবে।

আপনার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী কিংবা নিকটজন সবার কাছেই আপনি তখন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারেন। আপনার কাছে তাদের জিজ্ঞাসা থাকতে পারেন আপনার এয়ারলাইন্স কোথায় কোথায় যায়, কোন রুটে কত ভাড়া, কার্গো বহন করে কিনা, আপনারা কোন ধরনের বিমান চালান, নতুন কোনো রিক্রুটমেন্ট আছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনি আদৌ সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন কিনা সেটা হয়তো চিন্তাও করছে না। তাদের জানতে চাওয়ার মূল কারণ একটাই আপনি একটি নির্দিষ্ট এয়ারলাইন্সের কর্মী। কোনো প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এড়িয়ে গেলে আপনি প্রশ্নকর্তার কাছে একটি প্রশ্নবোধক হয়ে থাকবেন সেই সংগে আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ইমেজ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

প্রথম দিন থেকেই আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের একজন ব্র্যান্ড এম্বাসেডর। প্রথম দিনই আপনি নিজের প্রয়োজনে ট্রেনিং সেশন থেকে এয়ারলাইন্স এর হট লাইন নম্বর জেনে নেয়া খুবই জরুরি। যার মাধ্যমে ফ্লাইট ইনফরমেশন সহ অনেক উত্তর জেনে নিতে পারে। পাশাপাশি আপনার প্রতিযোগী কিংবা অন্যান্য এয়ারলাইন্স সম্পর্কেও জেনে নিবেন। নিজেকে ওয়ান ইন অল সলিউশন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করবেন। তাহলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারবেন।

কোম্পানির অতীত ইতিহাসসহ বর্তমান অবস্থা জেনে নিলেও আপনি নিজের পরিচয়কে শক্তভাবে তুলে ধরতে পারবেন। কাউকেই বলার সুযোগ নেই যে আপনি আজই কিংবা গতকাল জয়েন করেছেন, সেখানে আপনার ব্যর্থতা প্রকাশ পাবে। নিজেকে ব্যর্থ প্রমাণ না করে যোগ্য কর্মীর পরিচয় তুলে ধরেন।

শুধু এয়ারলাইন্স নয় আপনি যেকোনো প্রতিষ্ঠানে জয়েন করলে সেই প্রতিষ্ঠানের ভিতর বাহির কিংবা অতীত- বর্তমান- ভবিষ্যৎ সব কিছু জেনে নিয়ে নিজেকে যোগ্য কর্মী হিসেবে তুলে ধরবেন।

আপনি নিজেই ইয়েস্টারডে, টুডে কিংবা টুমোরো’র পার্থক্য তুলে ধরুন। যা আপনার সামনের দিনগুলোতে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।        

লেখক
মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স