কত টাকা না বাড়লে নতুন চাকরিতে যাবেন না
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই আর্থিক সংকটে রয়েছেন। সঙ্গত কারণেই বেতন বাড়িয়ে নতুন চাকরিতে যোগদানের চিন্তা করছেন। কেউ কেউ আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির অফারও পাচ্ছেন। কিন্তু বেতন নিয়ে দেখা দিচ্ছে নানা সংশয়। ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে জীবন ধারণ সম্ভব হবে কি না, এমন সাত পাঁচও ভাবছেন অনেকে। তবে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে, কত শতাংশ বেতন বৃদ্ধিতে নতুন চাকরিতে যোগ দেওয়া উচিত- এমন প্রশ্নে।
বিষয়টি খোলাসা করেই বলি। বর্তমানে আপনি ৬০ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন। নতুন একটি চাকরির অফার আসলো। তারা আপনাকে ৬৬ হাজার টাকা অফার করলো। তাহলে কি সেই চাকরি করা উচিত?
বিজ্ঞাপন
এমন পরিস্থিতিতে উত্তর হবে ‘না’। কারণ এক প্রতিষ্ঠান ছেড়ে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে গেলে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি হওয়া উচিত। এবার আপনি চিন্তা করুন, এক বছর পর আপনার মোট আয় কত হবে? প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকা বেতন পেলে এক বছর পর আপনার মোট আয় হবে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। যোগ হবে দুটি ঈদের বোনাস। সব মিলিয়ে আপনার বার্ষিক আয় হচ্ছে ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। একে যদি আপনি ১২ দিয়ে ভাগ করেন তাহলে আপনার মাসিক বেতন হবে ৬৫ হাজার টাকা। নতুন প্রতিষ্ঠানে এই টাকার ৪৫ শতাংশ বেশি বেতনের কথা বলতে হবে। অর্থাৎ ৯১ হাজার টাকা বলতে হবে
কর্মসংস্থান বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অন্তত ৩০ শতাংশ বেতন না বাড়লে নতুন কোনও প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়া উচিত নয়। এতে চাকরির বাজারে নিজের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।
নতুন প্রতিষ্ঠানে পে-স্লিপ দেখতে চাইলে কী করবেন?
সাধারণত কোনও প্রতিষ্ঠান চাকরি প্রার্থীর পে-স্লিপ দেখতে চাইতে পারে না। আইনগতভাবে এটি অবৈধ। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়োগ প্রতিষ্ঠান এগুলো জানতে চাইলে আপনিও পাল্টা প্রশ্ন করবেন তারা নিয়মিত কর দেয় কি না, তাদের প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স আছে কি না। স্বাভাবিকভাবেই কোনও প্রতিষ্ঠান এগুলো দেখাতে চায় না। তাই নিয়োগপ্রার্থী এগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে পে-স্লিপের ব্যাপারে তারা দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করবে না।
অপরদিকে সমমনা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোন পদে কত বেতন, দেওয়া হয় সেই তথ্য সংরক্ষণের দায়িত্ব মানবসম্পদ বিভাগের। প্রার্থীকে এ বিষয়ে কোনও প্রশ্ন করা উচিত নয়। তাই বর্তমান কোম্পানি আপনাকে কত টাকা বেতন দেয়- ইন্টারভিউয়ে এমন প্রশ্ন করা উচিত নয়।
চুক্তিপত্রে সই করতে বললে কী করবেন?
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী নিয়োগ প্রতিষ্ঠান প্রার্থীকে চুক্তিপত্রে সই করতে বলতে পারেন না। কোনও প্রতিষ্ঠান যদি শুরুতেই আপনাকে অবৈধ কাজ করিয়ে নিতে চায়, তাহলে তারা যে আপনাকে দিয়ে আরও অবৈধ কাজ করাবে না তার নিশ্চয়তা আছে? প্রকৃতপক্ষে অনেক প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি দুর্বল থাকার কারণে কর্মীদের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সুযোগ-সুবিধা দেয়। ফলে তারা মনে করে, প্রার্থী অন্য প্রতিষ্ঠানে সুবিধা পেলে চলে যাবেন। সেই ‘চলে যাওয়া’ ঠেকানোর জন্যই চুক্তিপত্রে সই করিয়ে নেয় অনেক নিয়োগ প্রতিষ্ঠান।
এমতাবস্থায় চাকরিতে যোগ দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনও প্রতিষ্ঠান কর্মীদের কাছ থেকে জোরজবরদস্তি করে শ্রম আদায় করতে পারে না এবং এই বিধান কোনোভাবে লঙ্ঘন করা হলে সেটি হবে দণ্ডনীয় অপরাধ। সে কারণে কোনও প্রতিষ্ঠান চুক্তিপত্রে সই করিয়ে নিলে প্রার্থী আইনগতভাবে এর মোকাবিলা করতে পারবেন।
এইচএকে/আরআর