১০ হাজার কনস্টেবল নেবে পুলিশ, প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
বাংলাদেশ পুলিশ নিয়মিত ট্রেইনি ক্রিুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে লোকবল নিয়োগ দেয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও কনস্টেবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। পুলিশের মানবসম্পদ শাখা থেকে জানা গেছে জুন মাসেই প্রায় ১০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তবে শিক্ষাগত ও শারীরিক যোগ্যতায় এবার কিছুটা পরিবর্তন আনা হবে বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে ২০২০ সালের শেষের দিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার প্রাদুর্ভাব এবং যোগ্যতা সংক্রান্ত কিছু মানদণ্ড নির্ধারণের কারণে তা পিছিয়ে যায়। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া জুনে শুরু হয়ে প্রায় দুই মাস চলমান থাকবে।
বিজ্ঞাপন
আবেদন যোগ্যতায় যেসব পরিবর্তন
কয়েক বছর ধরে কনস্টেবল পদে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদণ্ড ছিল কমপক্ষে জিপিএ-২.৫ সহ এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। তবে এবার যোগ্যতার মানদণ্ড কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে। কনস্টেবল পদে আবেদনের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা এইচএসসি করা হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
এছাড়া এবার নিয়োগের ক্ষেত্রে উচ্চতা ও বুকের মাপে কিছুটা পরিবর্তন আনা হতে পারে। এতদিন পুরুষদের কনস্টেবল হওয়ার জন্য উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ও নারীদের জন্য ৫ ফুট ২ ইঞ্চি ছিল। এবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে নারীদের উচ্চতার মানদণ্ড ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি করা হতে পারে। আবেদনকারীদের বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ২০ বছর।
নিয়োগ পরীক্ষার ধরন ও প্রস্তুতি
কনস্টেবল নিয়োগে সাধারণত তিন ধাপে পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রথম ধাপে হয় শারীরিক পরীক্ষা। দ্বিতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষা ও চূড়ান্ত ধাপে হয় মৌখিক পরীক্ষা। প্রস্তুতির মূল জায়গা এই তিনটি ক্ষেত্রেই।
শারীরিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সাধারণত বয়স, বুকের প্রস্থ, উচ্চতা ও ওজন মাপা হয়। এছাড়া ক্ষেত্রবিশেষ লং জাম্প পরীক্ষাও হয়। ফলে যারা পুলিশে কাজ করতে আগ্রহী সবাইকে ওজন, সুস্বাস্থ্য ও লং জাম্পের প্র্যাকটিস করতে হবে। নিয়মিত খাওয়া দাওয়া ও ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
অনেকেই আছেন কয়েক মিটার দৌড়েই হাঁপিয়ে যান কিংবা মাঝপথে পড়ে যান। এমন হলে কনস্টেবল নিয়োগের প্রাথমিক বাছায়ে উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব নয়। তাই নিয়মিত দৌড় ঝাপের প্র্যাকটিস করতে হবে।
এখানে আরও একটি কথা বলে রাখা ভালো, প্রাথমিক বাছাইয়ের সময় হাফহাতা বা টি-শার্ট পরে যাওয়াটা উত্তম। এছাড়া দৌড়ের উপযোগী হাফপ্যান্ট বা ঢিলেঢালা ট্রাউজার পরতে হবে, যাতে ব্যায়ামের সময় অসুবিধা না হয়। পুরুষ ও নারীরা নিজেদের উপযোগী একাধিক পোশাক সঙ্গে রাখতে পারেন, যেন ব্যায়ামের সময় বদলে নেওয়া যায়।
লিখিত পরীক্ষার কায়দা কানুন
শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে। পূর্ণমান থাকবে ৪০। এরমধ্যে সাধারণত বাংলা ১৫, ইংরেজি ১৫ এবং সাধারণ গণিত থেকে ১০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির বোর্ড নির্ধারিত পাঠ্য বই থেকেই প্রশ্ন করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেতে হবে কমপক্ষে ৪৫ শতাংশ নম্বর।
এছাড়াও বাংলা অংশে রচনা, অনুচ্ছেদ লিখন, ভাব সম্প্রসারণ, ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ, এক কথায় প্রকাশ, বাগধারা, সমার্থক শব্দ, সন্ধি বিচ্ছেদ থেকে প্রশ্ন আসে। এ অংশে ভালো করার জন্য এসএসসি পর্যায়ের বাংলা প্রথম পত্র বইয়ের সঙ্গে বোর্ডের ব্যাকরণ বইটিও পড়তে হবে। জানতে হবে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ, পুলিশ বাহিনী ও সাম্প্রতিক বিষয়াবলী।
ইংরেজি অংশে Essay, Paragraph, Letter, Application, Translation, Sentence Making, Fill in the Gaps থেকে প্রশ্ন আসে। Fill in the Gaps অংশে ভালো করার জন্য Grammar-এর বিভিন্ন Rules, Tense, Noun, Pronoun, Adjective, Verb-এর বিভিন্ন Form ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে।
Sentence Making-এর ক্ষেত্রে বাক্য যেন অর্থবোধক হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির উপযোগী Essay, Paragraph, Letter, Application প্রস্তুতি নিলেই চলবে।
পাটিগণিত ও বীজগণিত থেকে প্রশ্ন করা হয় সাধারণ গণিত অংশে। সাধারণত শতকরা, সুদ কষা, লাভ-ক্ষতি, ল.সা.গু., গ.সা.গু. থেকে প্রশ্ন থাকে। অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত বইয়ের অঙ্ক চর্চা করলেই সব প্রশ্নের উত্তর করা যাবে।
চূড়ান্ত পরীক্ষায় কী হয়?
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এতে থাকবে ২০ নম্বর। বলা হয়ে থাকে, চাকরি পাওয়া ক্ষেত্রে ভাইভা পরীক্ষা বা মৌখিক পরীক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পরিচিতিমূলক প্রশ্নের পাশাপাশি প্রার্থীর মানসিক দক্ষতা, মূল্যবোধ বিচারের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা হয়। তবে এতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় প্রার্থীর কথা বলার ধরন, উপস্থাপনা। তাই অভিজ্ঞরা সবসময়ই বলে থাকেন, ভাইভাতে যার আত্মবিশ্বাস যত বেশি থাকবে, চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ততই বেশি থাকবে।
পোশাক হতে হবে মার্জিত। যে বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে তার যথাযথ উত্তর দিতে হবে, অপ্রাসঙ্গিক কোনও কথা বলা যাবে না।
বেতন ও অন্যান্য সুবিধা
১। ছয় মাসের প্রশিক্ষণ চলাকালে পাওয়া যাবে পোশাক, থাকা খাওয়া ও চিকিৎসা সুবিধা। পাশাপাশি দেওয়া হবে ৫০০ টাকা হারে মাসিক ভাতা।
২। চূড়ান্ত নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন প্রদান করা হবে ১৭তম গ্রেডে। পাওয়া যাবে পোশাক সামগ্রী, ঝুঁকি ভাতা, চিকিৎসা সুবিধা এবং স্বল্পমূল্যে রেশন সামগ্রী। রয়েছে পদোন্নতিসহ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার সুযোগও।