আমি প্রিলি খারাপ করলে যা করতাম
একজন ভুক্তভোগী অপরের যন্ত্রণা অনেকটাই উপলব্ধি করতে পারে। ৩ বছর বেকার ছিলাম; অনেকবার হোচট খেয়েছি, কষ্ট পেয়েছি, কেঁদেছি। সময়ের ব্যবধানে সব ভুলে আবার নতুন করে শুরু করেছি। আমি যদি ৪৫তম প্রিলিতে খারাপ করতাম, আমিও কান্না করতাম, কারও ফোনকল রিসিভ করতাম না। ফেসবুক গ্রুপে আর ব্যক্তিগত টাইমলাইনে বন্ধু ও সহযোদ্ধাদের আলহামদুলিল্লাহ্ লিখা স্ট্যাটাস চুপি চুপি দেখতাম। একরাত কেঁদে হালকা হতাম। পরের দিন নতুন করে ক্যারিয়ার প্লান করতাম।
প্রিলির পড়া যেহেতু আমার পড়া আছে, আমি প্রিলি আপাতত পড়তাম না, ৪৬ প্রিলির ডেট দিলে পড়াগুলো রিভাইস দিবো আবার। হয়তো আমি ৪/৫ নম্বর পিছিয়ে থাকার জন্য টিকিনি, হয়তো এক্সাম হলে কয়টা উত্তর করবো বুঝে উঠতে না পেরে নিগেটিভ মাইনাস পেয়েছি অথবা আমার ভাগ্য খারাপ ছিল। বিসিএসের প্রিলির প্রস্তুতি দিয়ে সরকারি ব্যাংকের প্রিলিগুলোও টিকে যাওয়া সম্ভব, তাই ব্যাংক প্রিলিও পড়বো না।
বিজ্ঞাপন
প্রিলি উত্তীর্ণদের সঙ্গে আমিও রিটেন পড়তাম, হয়তো প্রিলির রেজাল্ট গোপন করে কোনো কোচিং সেন্টারে লিখিত প্রোগ্রামে ভর্তিও হতাম। বিসিএসের বাইরেও সরকারি ব্যাংক, দুদক, এনএসআই, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডসহ সব জায়গায় ভাইভা দিতে হলে লিখিত পরীক্ষায় ভাল করতে হয়, যা বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি দিয়েই সেরে ফেলা যায়। তাছাড়া আমি তো ৪৬ বিসিএস দিবোই, তখন এই রিটেন প্রস্তুতি আমাকে অনেকটাই এগিয়ে রাখবে।
আমি সরকারি চাকরির পাশাপাশি প্রাইভেট চাকরিতে আবেদন ও চেষ্টা করে যেতাম। জীবন বাঁচানো ফরজ। বিসিএস যতই স্বপ্ন হোক, বাংলাদেশে বিসিএসের বাইরে কোটি মানুষ অন্য চাকরি করতেছে। ভাগ্যে না থাকলে আর আর্থিক সীমাবদ্ধতায় স্বপ্ন বিলাসিতা হয়ে যায়। তবে সরকারি চাকরির মধ্যে ব্যাংক নিয়ে ‘হার্ড অ্যান্ড সোল’ চেষ্টা করতাম। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতি বছর ব্যাংকে অনেক সার্কুলার হওয়ায় ব্যাংক চাকরির প্রস্তুতি অনেকটাই রিস্ক ফ্রি ইনভেষ্টমেন্ট।
আমার সাবেক রুমম্যাট অনেক মেধাবী। স্টুডেন্ট লাইফ শেষ করে কয়েক মাসের ব্যবধানেই সরকারি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হয়েছিল। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রথম শ্রেণির চাকরিতে কর্মরত আছে। এই চাকরিটা না হলে সে চেষ্টা করে আরো অনেক ভালো ভালো চাকরি পেয়ে যেতো হয়তো। আশ্চার্যের বিষয়, কয়েকবার চেষ্টা করেও সে বিসিএস প্রিলি পার হয়ে পারেনি। আমার পরিচিত এরকম ডজনখানেক উদাহরণ আছে, যারা ক্যাডার সার্ভিসের সমমান বা ভালো অবস্থানে যেতে পেরেছে, কিন্তু বিসিএসে সফল হতে পারনি। আগেরবার প্রিলি ফেইল, পরের বার ফার্স্ট চয়েজ পেয়েছে এরকম উদাহরণও কম নেই। তাই আজকের প্রিলি রেজাল্ট খারাপ মানেই আপনার সব শেষ নয়। আপনার শেষ কোথায় সেটা নির্ভর করবে আপনার সিদ্ধান্তের উপর। শুভকামনা।
লেখক: ৩৫তম বিসিএস ক্যাডার (সাধারণ শিক্ষা)