ছাঁটাই নিয়ে উদ্বিগ্ন কর্মীরা, নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কাজে
বিশ্বব্যাপী ছাঁটাই কাণ্ডে উদ্বিগ্ন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কর্মক্ষেত্রে। বেশিরভাগ কর্মীরাই নিজের অবস্থান নিয়ে নিশ্চিত নন, তারা আছেন নাকি বাদ যাওয়ার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন।
‘প্রতিদিন সকালেই আমার ঘুম ভাঙ্গে এক বুক ভয় ও আতংক নিয়ে’ সম্প্রতি বিবিসি ওয়ার্ক লাইফের কাছে এমনই মন্তব্য করেছেন ৪১ বছর বয়সী টেক ওয়ার্কার কারা। তিনি মূলত নিউইয়র্ক সিটিতে কাজ করেন। তিনি তার প্রতিষ্ঠানে ৪ বছর ধরে কাজ করছেন। কিন্তু তার কাজে মনে হচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যেই চাকরিচ্যুত হতে যাচ্ছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
তিনি কিছুটা আক্ষেপের সুরেই বিবিসিকে বলেন, ‘আমি শতভাগ নিশ্চিত, কোনো একদিন ছাঁটাইয়ের ইমেইল পাবো। এটা কেবল মাত্র একটি সময়ের ব্যাপার।’
মেটা থেকে অ্যামাজন : যে কারণে ছাঁটাই বেশি, নিয়োগ কম
চাকরি হারানোর এই ভয় কারার মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মানসিক ভাবে তিনি বিষয়টি নিয়ে কিছুটা বিরক্তও বটে। ইদানীং তিনি কম ঘুমাচ্ছেন, মাঝে মধ্যেই চাকরি আর নেই- এই ভেবে কান্নাকাটি করছেন। যা তার কর্মক্ষমতাকে কিছুটা হলেও হ্রাস করছে।
তিনি বলেন, ‘অনিশ্চয়তা খুবই বাজে একটি বিষয়। মাঝে মধ্যে মনে হয় এখনই চাকরি ছেড়ে এই দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত করি। কিন্তু নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে আর পেরে উঠছি না। চাকরির নিশ্চয়তা একটি মিথ ছাড়া আর কিছুই নয়।’
শুধু কারাই নয়। গত বছর থেকেই চাকরিচ্যুতের তালিকা বড় হচ্ছেই। বিশেষ করে শেষ চার মাস। গোটা বিশ্বের টেক ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে। ২০২২ সালেই ছাঁটাই হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার কর্মী। লেঅফ ডট ফাই এর প্রকাশিত ডাটায় দেখে গেছে, চলতি বছর আরও ৭৬ হাজারের মতো ছাঁটাই হয়েছে।
সহানুভূতিশীল ছাঁটাইয়ের নামে আসলে যা হচ্ছে
সঙ্গে বাড়ছে এর নেতিবাচক প্রভাব। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ছাঁটাইয়ের কারণে কর্মীদের উপর আর্থিক প্রভাবই পড়ে না, সঙ্গে শারীরিক প্রভাবও পড়ে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য-জনিত নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
প্রায় ৩শ জন চাকরিচ্যুত কর্মীর উপর সম্প্রতি একটি গবেষণা করা হয়েছে। যার ফলস্বরুপ, দেখা গেছে এসব কর্মীদের মধ্যে ডিপ্রেশন, পরিবারের প্রতি অনীহা, জীবন নিয়ে অসন্তুষ্টিতে ভুগছে।
এর আগে আরও একটি গবেষণায় দেখা গেছে চাকরিতে থাকা অবস্থায় কর্মীদের যেমন শারীরিক অবস্থা ছিল, চাকরি যাওয়ার পরে তাদের শারীরিক অবস্থার মাত্র ৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরমধ্যে তারা স্ট্রেস-সম্পর্কিত অসুস্থতা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং আর্থ্রাইটিস সহ নানাবিধ সমস্যায় ভুগছে।
কর্মক্ষেত্রের ইঁদুর দৌড় প্রতিযোগিতা মানসিক সমস্যার কারণ!
স্বাস্থ্যগত এই সমস্যা শুধুমাত্র চাকরিচ্যুত কর্মীদেরই হচ্ছে তা কিন্তু নয়। কারার মতো, যারা চাকরি হারানোর আতংকে রয়েছেন তাদেরও হচ্ছে।
এ বিষয়ে হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউতে নির্বাহী প্রশিক্ষক এবং লেখক মেলোডি ওয়াইল্ডিং বলেন, চাকরির নিরাপত্তাহীনতা কর্মীদের কাজের অনুপ্রেরণা হ্রাস করছে। একই সঙ্গে মানসিক-স্বাস্থ্যের সমস্যা যেমন উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
বিবিসি/আরআর