সহানুভূতিশীল ছাঁটাইয়ের নামে আসলে যা হচ্ছে
আজ এই প্রতিষ্ঠানে ছাঁটাই, কাল আরেক প্রতিষ্ঠানে ছাঁটাই- কয়েক মাস ধরেই গণমাধ্যমে রাজত্ব করছে এসব শিরোনাম। মূলত অর্থনৈতিক দৈন্যদশা, প্রতিষ্ঠানের রাজস্বে ঘাটতিসহ নানা ধরনের জটিলতায় গণ-ছাঁটায়ের মতো ঘটনা ঘটছে। এই জোয়ারে গা ভাসিয়েছে গুগল, মেটা ও টুইটারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী টেক নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা গত বছরের শেষ প্রান্তিকে এক নোটিশেই কয়েক হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে।
কর্মী ছাঁটাইয়ের এই গণ-জোয়ার নতুন বছরে এসে আরও চাঙ্গা হয়েছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এমন কার্যক্রমে প্রভাবিত হয়ে বেশ কিছু আঞ্চলিক কিন্তু টেক দুনিয়ায় প্রভাবশালী এমন প্রতিষ্ঠানগুলোও কর্মী ছাটাই করেছে।
বিজ্ঞাপন
মেটা থেকে অ্যামাজন : যে কারণে ছাঁটাই বেশি, নিয়োগ কম
লেঅফ.এফওয়াইআই নামের একটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসেই ৩৫৯ প্রতিষ্ঠান প্রায় ১ লাখ কর্মীকে ছাঁটাই করেছে। যেখানে পুরো ২০২২ সালের ১ লাখ ৬০ হাজার লোক ছাঁটাই হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে ছাঁটাই প্রক্রিয়া আরও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে কোম্পানিগুলোর মধ্যে ‘কপিক্যাট ছাঁটাই’য়ের একটি প্রবণতা তৈরি হবে। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, বেশিরভাগ টেক কর্মীরা জেনে গেছে তারা হয়তো ইতোমধ্যেই ছাঁটায়ের তালিকায় রয়েছে, অথবা ভবিষ্যতে যুক্ত হবে। আর এসব কোম্পানি কর্মী ছাঁটাইয়ের জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছেন। কেউ কেউ ছাটায়ের সময়ে ইমোশনাল বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ দু:খ প্রকাশ করছেন। কেউ আবার বলছেন, বাধ্য হয়েই তারা এমনটি করছেন। কিন্তু কোনও প্রতিষ্ঠান কি সত্যিকার অর্থেই তার কর্মীদের সহানুভূতিশীল ভাবে ছাঁটাই করছেন?
কর্মক্ষেত্র নিয়ে কাজ করেন এমন অনেক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণ ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়াটি আরও সুন্দর, মানবিক ও সহানুভূতিশীল হতে পারতো। কিন্তু ইতোমধ্যেই অনেক প্রতিষ্ঠান সহানুভূতিশীল ছাঁটাইয়ের নামে যা করছে, তা মোটেও সহানুভূতিশীল ছাঁটাই নয়। সত্যিকার অর্থে সহানুভূতিশীল ছাঁটাইয়ের অস্তিত্বই নেই।
চলুন কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক।
টেক কোম্পানি জুম কর্মী ছাঁটাই করেছে মেইল দিয়ে। ধরুন আপনি রাতে খেতে বসেছেন। হঠাৎ আপনার ই-মেইলে নোটিফিকেশন আসলো। চেক করে দেখলেন এইচআর থেকে বলছে, আপনার চাকরি আর নেই। জুম ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে অনেকটাই এমনই হয়েছে। সকালে অফিসে এসে দেখেছেন, অফিসের পিসি ও ইমেইল আর লগইন করতে পারছেন না। পরে জানতে পেরেছেন, তাদের আর চাকরি নেই।
কর্মক্ষেত্রের ইঁদুর দৌড় প্রতিযোগিতা মানসিক সমস্যার কারণ!
২০২১ সালে ইউএস মর্টগেজ কোম্পানি বেটার একবার জুম কলে ৯০০ কর্মীকে ছাটাই করেছিল। তখন প্রতিষ্ঠানটির সিইও ভিশাল গ্র্যাং কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আপনারা যারা এই কলে রয়েছেন, সবাই আন-লাকি। কারণ এই কলের সবাই ছাঁটাই হচ্ছেন। আপনাদের ছাঁটাই কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে।
তবে এটি অবশ্যই মানতে হবে, যারা রিমোর্ট ওয়ার্ক করেন, তাদের ছাঁটাই প্রক্রিয়া একটি ইমেইল বা ফোন কলের মাধ্যমে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে সবকিছুর মধ্যেই মানবিকতা থাকা উচিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরণের প্রক্রিয়া কখনই মানবিক হতে পারে না, সহানুভূতিশীলতা দূরে থাকুক।
সম্প্রতি এ নিয়ে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের সহযোগী অধ্যাপক জোনাথ বোথ কথা বলেছেন বিবিসি ওয়ার্ক লাইফের সঙ্গে। তিনি বলেন, সাধারণত কর্মীদের ছাঁটাইয়ের বিষয়ে ই-মেইল না পাঠানোই উচিত।
তিনি বলেন, ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের উপর আরও মানবিক হওয়া দরকার। তাদের তখনকার মানসিক অবস্থা বোঝা উচিত। এবং সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ ছাঁটাই হওয়ার বিষয়টি প্রত্যেক কর্মীর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আর এই প্রক্রিয়াটি যদি হয় আরও ভয়ংকর, তবে নেতিবাচক প্রভাবের বিস্তার আরও বৃদ্ধি পাবে। তাই বিষয়টি নিয়ে আরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন।
বিবিসি/আরআর