তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাড়ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ
ইনফরমেশন টেকনোলজি বা আইটি খাত দেশের ক্রমবর্ধমান ও সম্ভাবনাময় কর্মক্ষেত্রগুলোর একটি। দিন দিন এ ক্ষেত্রটি বড় হচ্ছে। একই সঙ্গে উন্মোচিত হচ্ছে নিত্য নতুন কর্মসংস্থানের দুয়ার। প্রতিষ্ঠানগুলোও ঝুঁকছে অ্যানিমেশন ও মাল্টিমিডিয়া, হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্কিং, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট ও ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের দিকে। প্রায় প্রত্যেকটি কর্পোরেট হাউজেই রয়েছে নিজস্ব আইটি বিভাগ।
কার্যতই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তরুণ প্রজন্মও চাইছেন আইটি সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে। বাড়ছে প্রতিযোগিতাও। একইসঙ্গে নিয়োগকর্তারা খুঁজছেন দক্ষ কর্মী। ফলে এ খাতে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে দরকার পর্যাপ্ত জানাশোনা।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয় বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) নিয়ে কাজ করা টাসকিয়েটর এর সিনিয়র ডাটা এনালিস্ট সাজোয়ার হোসেন বলেন, ‘আইটি সেক্টর দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় একটি খাত। দিনকে দিন এ খাতটির পরিসর আরো বড় হচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে কাজের সুযোগ। সমস্যা হচ্ছে চাহিদা থাকা শর্তেও অনেকেই কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। এর একটিই কারণ, যোগ্যতা না থাকা। তাই কেউ যদি সিদ্ধান্ত নেয়, ক্যারিয়ার হিসাবে আইটি খাতকে বেছে নেবে; তবে শুরু থেকেই আইটি সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা করতে হবে। এ খাতে দক্ষ লোকের চাহিদা অনেক বেশি।’
যেসব পদে কাজের সুযোগ রয়েছে
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইনফরমেশন টেকনোলজি খাতে চাকরির সুযোগ অনেক। প্রায়শই দেখা যায় একজন শিক্ষার্থী ইনফরমেশন টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা শেষে হেল্প ডেস্ক টেকনিশিয়ান হিসাবে চাকরিতে প্রবেশ করেন। অনেকেই এ পদটিকে আইটি সেক্টরে কাজের প্রথম ধাপ বলে মনে করেন। পাশাপাশি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসাবেও প্রাথমিক ভাবে জনবল নিয়োগ দিয়ে থাকে। এর পরেই থাকে সিস্টেম এনালিস্ট হিসাবে কাজের সুযোগ। প্রতিষ্ঠানগুলো সিস্টেম এনালিস্ট পদে প্রতিবছরই লোকবল নিয়োগ দিয়ে থাকে। একজন আইটি সিকিউরিটি হিসাবেও কাজ করার সুযোগ রয়েছে বিভিন্ন কর্পোরেট অফিসে। সাইবার আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে সাইবার সিকিউরিটি পদে বিভিন্ন কোম্পানি লোকবল নিয়োগ দেয়। এছাড়াও নেটওয়ার্ক এডমিনিস্ট্রেটর, ডাটাবেজ এডমিনিস্ট্রেটর, আইটি কনসালটেন্ট, প্রজেক্ট ম্যানেজার, কোয়ালিটি এস্যুরেন্স, ক্লাউড আর্কিটেক্ট ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সসহ বিভিন্ন পদে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয় ড্রিম টেকনোলজি ইন্সটিটিউটের (ডিআইটি) পরিচালক আলতাফ হোসেন জানান, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের আইটি খাত এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে নিয়মিত তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র। কেবল মাত্র আইটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানই নয়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও প্রয়োজন আইটি বিষয়ক লোকবল। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি মোবাইল প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান মোবাইল উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানেও কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে।’
পদ অনুসারে কাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য
হেল্প ডেস্ক টেকনিশিয়ান পদের কর্মীদের প্রাথমিক দায়িত্ব থাকে কাস্টমারদের সহযোগিতা করার। এ পদে কর্মরতদের সাধারণত হার্ডওয়্যার, প্রিন্টার ও ইন্টারনেটের ছোটখাটো সমস্যা সমাধান করতে হয়। সিস্টেম এনালিস্ট পদের কাজ হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয়ের উপর গবেষণা, উন্নয়ন ও কোম্পানির ইনফরমেশন সিস্টেমের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা।
একটি প্রতিষ্ঠানে আইটি সেক্টরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ হচ্ছে আইটি সিকিউরিটি। প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সাইবার হামলা থেকে রক্ষা করাই তাদের প্রধান কাজ। আর নেটওয়ার্ক এডমিনিস্ট্রেটর পদে নেটওয়ার্ক সেটআপ থেকে শুরু করে নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ ও নেটওয়ার্ক উন্নত করার কাজ করতে হয়। ডাটাবেজ এডমিনিস্ট্রেটর পদে কাজ করতে চাইলে একটি কোম্পানির সব ধরনের তথ্যকে সঠিক ভাবে মূল্যায়ন ও ব্যবহার করার দায়িত্ব নিতে হবে।
আইটি কনসালটেন্ট সাধারণত নির্দিষ্ট কোন কোম্পানির আওতাধীন না থেকে সব ধরনের ক্রেতাদের ফ্রিল্যান্সার হিসাবে সহায়তা করে। প্রজেক্ট ম্যানেজারের কাজ হচ্ছে টেকনিক্যাল বিষয়ক প্রজেক্ট তৈরি করা। নতুন পণ্য বা সফটওয়্যারের সমস্যা দূর করে ক্রেতাদের জন্য মানসম্মত পণ্য নিশ্চিত করা কোয়ালিটি এস্যুরেন্স পদের কাজ।
সাম্প্রতিক সময়ে অসংখ্য কোম্পানি ক্লাউড নেটওয়ার্কিং দিয়ে নিজস্ব সার্ভার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে মাঝে মাধ্যেই ক্লাউড জনিত কাজে সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যা দূরীকরণের দায়িত্ব থাকে একজন ক্লাউড আর্কিটেক্টের উপর। সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় মেশিন লার্নিং প্রসেস বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। আর এসব কাজ করার জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই দায়িত্ব দেয় একজন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে।
একাডেমিক পড়াশোনা ও বাস্তবিক জ্ঞান
সাধারণত আইটি সেক্টরে কাজ বলতে বিজনেস আইটি ও কর্পোরেট আইটি বোঝায়। দুই মাধ্যমে কাজের ধরন আলাদা। যেসব প্রতিষ্ঠান কেবল মাত্র আইটি নির্ভর প্রতিষ্ঠান তাদের বলে বিজনেস আইটি। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হলে আইটি বিষয় উচ্চমানের দক্ষ হতে হবে। সাধারণত এসব প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশষজ্ঞদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এর ভিন্ন চিত্র কর্পোরেট হাউজ গুলোতে। এসব প্রতিষ্ঠান সাধারণত এমন কাউকে খুঁজেন যারা সব বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা রাখে। তবে ফ্রেশারদের কর্পোরেট হাউজগুলোতেই চাকরি নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারবে। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, কেবল মাত্র একাডেমিক লেখাপড়া দিয়ে চাকরি-যুদ্ধে নামা যাবে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে আইটি বিষয়ক কোন না কোন বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।
আগেই বলা হয়েছে এ খাতটি ক্রমবর্ধমান কর্মক্ষেত্র। এতে প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে নতুন নতুন বিষয়। ফলে এ মাধ্যমে কাজ করার প্রথম হাতিয়ার হচ্ছে সবসময় নিজেকে আপ টু ডেট রাখা। বিশেষ করে সব ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের উপর প্রাইমারি ধারণা থাকতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন জরিপ পরিচালনা করা, গাণিতিক সমস্যা সমাধানে পটু, সফটওয়্যার গঠন সম্পর্কে সম্যক ধারণা, সিস্টেম এনালিস্ট করার যোগ্যতা থাকা চাই। ডাটাবেজ নিয়ে খুব বেশি কাজ হচ্ছে। ফলে এ বিষয় সম্পর্কে বিষদ জানাশোনা এখন সময়ের দাবি। একই সঙ্গে এসকিউএল ও তথ্য জমা করার পদ্ধতি জানতে হবে।
যারা বিভিন্ন কোম্পানিতে সফটওয়ার বা অ্যাপ্লিকেশন ইঞ্জিনিয়ার পদে কাজ করতে চান, তাদের অবশ্যই ব্যাকএন্ড, ফ্রন্ট-এন্ড, ডেভঅপ্স, সিস্টেম অ্যাডমিন ও কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স বিষয় ধারণা থাকতে হবে। অধিকাংশ আইটি এক্সপার্টরাই বলে থাকেন, আইটি সেক্টরকে ক্যারিয়ার হিসাবে নিতে হলে প্রোগ্রামিং স্কিল বাড়াতে হবে। তবে সিস্টেম বা অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলেপমেন্টের জন্য একাডেমিক ডিগ্রির চেয়ে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার কদর বেশি। এক্ষেত্রে নিজের কোন প্রজেক্ট বা গিটহাপ রেপো থাকলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
এ খাতে সুযোগ সুবিধা কেমন?
ইনফরমেশন টেকনোলজি বা আইটি বেতন ও সুযোগ সুবিধার বিষয়টি প্রতিষ্ঠান ভেদে ভিন্ন হতে পারে।
১। একজন ফ্রেশার বা এন্ট্রি লেভেলে মাসিক ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার মত হতে পারে।
২। ১-২ বছর অভিজ্ঞদের জন্য মাসিক ৫৫ হাজার থেকে ৮৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ৩-৫ বছরের অভিজ্ঞদের মাসিক বেতন ১ লক্ষ টাকার উপরে হতে পারে।
৩। ৮-১০ বছরের অভিজ্ঞদের প্রতিষ্ঠান ভেদে মাসিক বেতন ২লক্ষ টাকা হতে পারে।