গত তিন মাসের সেনা মোতায়েন, হুমকি-পাল্টা হুমকি, বিভিন্ন আশঙ্কার কথা। সবকিছুকে একপাশে সরিয়ে বড় পদক্ষেপের দেখা মিলেছে মঙ্গলবার। রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তের উত্তেজনা এখন আর কেবল উত্তেজনায় সীমাবদ্ধ নেই। দাবার বোর্ডে চাল দেওয়া শুরু হয়েছে।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড লুহানস্ক ও দোনেতস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার আচরণে স্পষ্ট, এখানেই থেমে থাকবেন না তিনি। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের এই দুটি অঞ্চলকে দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে কড়া বার্তাই দিতে চেয়েছেন পুতিন।

অনেকের মনেই প্রশ্ন- ইউক্রেন ইস্যুতে এখন কী করবে যুক্তরাষ্ট্র? তারা কি সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে? আপাতত ওই সম্ভাবনা কম। যুক্তরাষ্ট্রে সংবাদ মাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, রাশিয়ার ওপর নেমে আসবে শক্তিশালী অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। যার হুমকি তারা বহু আগে থেকেই দিয়ে আসছিল। 

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা ইতোমধ্যেই রাশিয়ার নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারটি চূড়ান্ত করেছে। ব্রাসেলসে রাষ্ট্রদূতদের হওয়া বৈঠকের একটি সূত্র সংবাদ মাধ্যমটিকে এই খবর দিয়েছে।

বিষয়টি মঙ্গলবার প্যারিসে হতে যাওয়া অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে নতুন করে পর্যালোচনা করবেন ইইউয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়ার সরকার, বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ও বিচ্ছিনতাবাদী অঞ্চগুলোর ওপর এই নিষেধাজ্ঞা নেমে আসতে পারে। 

আটালান্টিক কাউন্সিলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুটি অঞ্চলকে দেশ হিসেবে ঘোষণা করে পুতিন এক ধরনের উস্কানি দিয়েছেন। এখন যুক্তরাষ্ট্র চুপ থাকলে পুতিনের আচরণ আরও উদ্ধত্বপূর্ণ হতে পারে। রাশিয়া প্রেসিডেন্টকে থামাতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের এখন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। 

এক্ষেত্রে তাদের প্রধান অস্ত্র অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া। স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা হওয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড লুহানস্ক ও দোনেতস্ককে দিয়ে শুরু হতে পারে সেটি। রাশিয়া যদি আবারও উস্কানিমূলক কিছু করে, তখন আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার দিকে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

গত বছর অনুমতি দেওয়া নর্ড স্ট্রম-২ এর ওপরও নিষেধাজ্ঞা নেমে আসতে পারে। এটি না হলেও রাশিয়ার অন্তত একটা বড় ব্যাংক ও রাশিয়া প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসবে। 

আটালান্টিক কাউন্সিলের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রকে এটি নিশ্চিত করতে হবে যেন রাশিয়ার প্রতি শক্ত বার্তা যায়। রাশিয়ার ঋণের বাজারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ও সুইফট অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় দেওয়া নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে হবে। সবশেষে তাদের ইউক্রেন সীমান্তে আরও বেশি সৈন্য পাঠাতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের আগেই অবশ্য পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাজ্য। রাশিয়ার পাঁচটি ব্যাংক ও তিন জন বিলিয়নিয়ারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তারা। দেশটির পার্লামেন্ট হাউজ অব কমন্সে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, এই পাঁচ ব্যাংক ও তিন ব্যক্তির যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পদ ফ্রিজ করা হবে।

ইউক্রেনের অবস্থা কেমন

গত কয়েক মাস ধরেই সামরিক শক্তি বৃদ্ধির ব্যাপারে কাজ করছিল ইউক্রেন। দেশটির অনেক সাধারণ মানুষ ইতোমধ্যেই সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন অর্থাৎ তারা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদিও মঙ্গলবার থেকে রাজধানী কিয়েভের অবস্থা আরও অস্থির হয়ে গেছে। দেশটির মানুষরা বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। অস্ত্রাগারও শূন্য হয়ে পড়েছে।

এমএইচ