ইউক্রেন কখনোই প্রকৃত রাষ্ট্র ছিল না : পুতিন
পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার সাথে পশ্চিমা দেশগুলোর চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দু’টি রুশপন্থি অঞ্চলকে ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে মস্কো। রাশিয়ার এই পদক্ষেপকে ইউক্রেনের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত বলে মনে করা হলেও রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ইউক্রেন কখনোই প্রকৃত রাষ্ট্র ছিল না।
এমনকি পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশ বলেও আখ্যায়িত করেছেন তিনি। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিজ্ঞাপন
সোমবার রাশিয়ার টিভি চ্যানেলে দেওয়া এক দীর্ঘ ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ইউক্রেন কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশ এবং এই দেশটি একটি ‘পুতুল সরকারের’ মাধ্যমে চলছে। তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেন কোনোদিনই প্রকৃত রাষ্ট্র ছিল না এবং আধুনিক ইউক্রেন রাশিয়ার মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়েছে।’
এছাড়া ইউক্রেনকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ধারণাকে রীতিমতো আক্রমণ করে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, এটা সরাসরি রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি। রুশ প্রেসিডেন্টের যুক্তি, রাশিয়ার নিরাপত্তার বিষয়টা বিবেচনায় নেয়নি ন্যাটো।
ভাষণ শেষ করার সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, রাশিয়াপন্থি বিদ্রোহীদের দখলে থাকা অঞ্চলগুলোকে স্বীকৃতি দেবে রাশিয়া। তার ভাষায়, আমি বিশ্বাস করি, অবিলম্বে দোনেতস্ক এবং লুহানস্কের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তের প্রয়োজন।
সেসময় তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ইউক্রেনকে বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে গুলি করা বন্ধ করতে হবে, না হলে এর পরিণতি মোকাবিলা করতে হবে। মূলত এই ঘোষণার কিছু পরেই বিদ্রোহী দু’টি অঞ্চলকে স্বীকৃতি দিয়ে দু’টি পৃথক ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেন পুতিন। সেখানে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সেনাবাহিনী সদ্য স্বাধীন দেশ দু’টিতে ‘শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকবে’।
তবে ‘শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত’ থাকার অর্থ আসলে কী - সেটি নির্দিষ্ট করে বলেনি রাশিয়া। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিন এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের বিদ্রোহী এলাকাতে রুশ সৈন্য পাঠাতে এবং সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
অবশ্য পূর্ব ইউক্রেনের দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সেখানে রুশ সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর মস্কো থেকে জারি করা পৃথক দু’টি ডিক্রিতে পূর্ব ইউক্রেনের এই অঞ্চলে শান্তি নিশ্চিতে কাজ করার জন্য সেনা মোতায়েন করতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন পুতিন।
এদিকে এক প্রত্যক্ষদর্শী বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শান্তি নিশ্চিতে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে পুতিনের নির্দেশনার পর দোনেতস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর ট্যাংক ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম প্রবেশ করতে দেখেছেন তিনি।
এছাড়া দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে ঠিক কী পরিমাণে রুশ সেনা মোতায়েন করা হবে সেটি অবশ্য ওই ডিক্রি বা অন্য কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। তবে মস্কোর সরকারি ডিক্রিতে বলা হয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনের সদ্য স্বাধীন এই অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটি তৈরির অধিকার রয়েছে রাশিয়ার।
টিএম