অন্তঃসত্ত্বা নারী যদি প্রত্যেকদিন চিনি-মুক্ত একটি চুইং গাম চিবান, তাহলে সেটি তাদের মৃত শিশু অথবা অপরিণত শিশু প্রসবের আশঙ্কা অনেকাংশে হ্রাস করে। আফ্রিকার দেশ মালাবিতে পরিচালিত বৃহৎ পরিসরের এক গবেষণায় এই আশার খবর মিলেছে।

গত শুক্রবার আন্তর্জাতিক চিকিৎসা বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণা সাময়িকী আমেরিকান জার্নাল অব অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গায়নোকোলজিতে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষকরা বলেছেন, চিনি-মুক্ত চুইং গামে জিলিটল নামের এক ধরনের রাসায়নিক থাকে। আর নিয়মিত চুইং গাম চিবানোর ফলে মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সুগার-ফ্রি চুইং গাম প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায়। আর এর দামও ধরাছোঁয়ার মধ্যে থাকায় যে কোনও পরিমাণ আয়ের পরিবারের অন্তঃসত্ত্বা নারীরা এই উপায় অবলম্বন করতে পারেন। যা মৃত শিশু অথবা অপরিণত শিশু প্রসবের আশঙ্কা হ্রাস করে। বিশ্বে অপরিণত শিশু প্রসবের হারের দেশগুলোর তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে মালাবি। দেশটিতে প্রায় ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ শিশু অপরিণত বয়সে জন্মগ্রহণ করে।

অতীতে অন্যান্য গবেষণায় দেখা যায়, মৃত বা অপরিণত শিশু প্রসবের অন্যতম কারণ মুখের অভ্যন্তরের দুর্বল স্বাস্থ্য অবস্থা। সেই সূত্র ধরে এবার গবেষকরা দেখতে চেয়েছিলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীর মুখের অভ্যন্তরের স্বাস্থ্য কীভাবে ভালো করা যায়। তারা দেখেছেন, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরপরই যদি কোনও নারী নিয়মিত একটি বা একাধিক সুগার-ফ্রি চুইং গাম চিবান, তাহলে তাদের মৃত শিশু অথবা অপরিণত শিশু প্রসবের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়।

গবেষকরা বলেছেন, গবেষণায় অংশ নেওয়া নারীদের মধ্যে যাদের নিয়মিত চুইং গাম চিবানোর অভ্যাস ছিল; তাদের ক্ষেত্রে অপরিণত শিশু প্রসবের ঘটনা ২৪ শতাংশ কম। এছাড়া তাদের কেউই ৩৭ সপ্তাহের আগে শিশুর জন্ম দেননি।

মালাবির বিজ্ঞানীদের এই গবেষণায় ৪ হাজার ৩৪৯ জন অন্তঃসত্ত্বা নারী অংশ নিয়েছিলেন। এতে দেখা গেছে, এই নারীদের মধ্যে নিয়মিত জিলিটল চুইং গাম চিবিয়েছেন এমন ৫৪৯ জনের বা ১২ দশমিক ৬ শতাংশের ক্ষেত্রে অপরিণত শিশু জন্মের ঘটনা ঘটেছে। যারা নিয়মিত চুইং গাম চিবাননি তাদের তুলনায় অপরিণত শিশু প্রসবের এই হার ২৪ শতাংশ কম। 

প্রায় ৪ হাজার নারীর প্রাথমিকভাবে দাঁতের পরীক্ষা এবং পরে চেকআপ করা হয়েছিল। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের চুইং গাম চিবানোর অভ্যাস অন্তঃসত্ত্বা নারীর দাঁতের স্বাস্থ্যও ভাল করে দিয়েছে। দাঁতের আশপাশে থাকা কোষ আর নানা ধরনের ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকে সংক্রমিত হচ্ছে না; মুখের ভেতরের নানা ধরনের প্রদাহও কমেছে।

চ্যাপেল হিলের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনার স্কুল অব মেডিসিনের মাতৃ-ভ্রূণ ওষুধ বিশেষজ্ঞ কিম বোগেস বলেছেন, গবেষণার এই ফলাফল অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক। গবেষকরা দুর্বল-প্রযুক্তির ব্যবহার করে সহজে প্রয়োগ করা যায় এমন একটি উপায় উদ্ভাবনের মাধ্যমে অত্যন্ত জটিল সমস্যার সমাধানের দিকে যাচ্ছেন। তবে এটি অন্যান্য সমস্যার সমাধানে কাজ করে কি-না সেটি জানার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

সূত্র: সায়েন্স নিউজ।

এসএস