ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে হিজাব নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। হিজাবের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ-পাল্টা বিক্ষোভের কারণে এই বিতর্কের ঢেউ ছাড়িয়েছে ভারতের সীমানা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে হিজাব ইস্যুতে রাজ্যজুড়ে প্রবল বিক্ষোভের জেরে শেষপর্যন্ত নির্দেশনা সংশোধনের পথে হাঁটতে পারে কর্ণাটক সরকার।

বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। এ বিষয়ে শুক্রবার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে যাচ্ছে রাজ্যটির মন্ত্রিসভা।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি কর্ণাটকের কলেজগুলোতে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরে ঢোকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল রাজ্যটির ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। তবে সেই নির্দেশ নিয়ে ভারত ও ভারতের বাইরে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে রাজ্যজুড়ে চূড়ান্ত অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা দেখা দেয়। বিতর্কিত ওই বিষয়টি এখনও কর্ণাটক হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।

শুক্রবারের প্রতিবেদনে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, হিজাবে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল কর্ণাটক সরকার তাতে কিছু পরিবর্তন আনতে পারে বলে তারা জানতে পেরেছে। বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইতোমধ্যেই কর্ণাটকের শিক্ষা দফতর তাদের হিজাব সংক্রান্ত এই নির্দেশনা সংশোধন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে। তবে বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন হওয়ায় তড়িঘড়ি করে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না রাজ্য সরকার।

এদিকে বৃহস্পতিবার হিজাবে নিষেধাজ্ঞা এবং সরকারি নির্দেশনা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা পিটিশনগুলো হাইকোর্টের ফুল বেঞ্চে শুনানির জন্য তোলা হয়। হিজাবে নিষেধাজ্ঞা সাম্য, ধর্ম, মত প্রকাশ, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং অধিকারের বিরুদ্ধে বলে আদালতে যুক্তি দেখানো হয়। অন্যদিকে এ ব্যাপারে পাল্টা যুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় চান রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল প্রভুলিং নাভাদগি।

পরে অ্যাডভোকেট জেনারেল আদালতে জানান, তিনি রাজ্য সরকারের কাছ থেকে এ ব্যাপারে নতুন নির্দেশনা চাইবেন। শুক্রবার বিকেলে আদালতে এ ব্যাপারে তিনি যুক্তি ও ব্যাখ্যা দেবেন বলেও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

কর্ণাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্থি, বিচারপতি কৃষ্ণ এস দীক্ষিত এবং বিচারপতি জে এম খাজির ফুল বেঞ্চকে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, এখানে কয়েকটি ছোট জিনিস আছে। উত্তরে আদালত এজি-কে জানায়, রাজ্য যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সে ব্যাপারে অ্যাডভোকেট জেনারেল তার যুক্তি শুরু করতে পারেন। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে আদালত এজি-কে আরও বলেন, ‘আপনি যদি সরকারি নির্দেশ সংশোধন করার চেষ্টা করেন, তবে সেটি ঠিক আছে।’

সূত্রের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, শুক্রবার কর্ণাটক হাইকোর্টে হিজাব মামলার শুনানি শুরুর আগেই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। মুখ্যমন্ত্রী বাসভরাজ বোমাইয়ের নেতৃত্বে রাজ্য মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকেই হিজাব ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

গত এক মাসের বেশি সময় ধরে কর্ণাটকের বিভিন্ন স্কুল কলেজে একদিকে হিজাব পরে ক্লাস করার অনুমতির দাবিতে আন্দোলন করছে মুসলিম ছাত্রীরা। অন্যদিকে হিন্দু শিক্ষার্থীরা গেরুয়া ওড়না পরে হিজাববিরোধী আন্দোলন শুরু করেছে।

কর্ণাটকের স্কুল-কলেজে হিজাব পরা মুসলিম মেয়েদের ঢুকতে না দেওয়াকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল, তা বর্তমানে দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যটির সীমানা ছাড়িয়ে দেশটির বাকি অংশেও ছড়িয়ে পড়েছে। হিজাবে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে দিল্লি থেকে পশ্চিমবঙ্গে। মুখ খুলেছেন দেশটির বড় বড় রাজনীতিক ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বরাও।

কর্ণাটকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে গত মাসে উদুপি জেলার সরকারি বালিকা পিইউ কলেজে ছয়জন মুসলিম ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে শ্রেণিকক্ষের বাইরে বসতে বাধ্য করার পর। সেই সময় কলেজ প্রশাসন জানায়, ইউনিফর্মের অংশ নয় হিজাব এবং ওই ছাত্রীরা কলেজের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। ছাত্রীদের  ক্লাসে হিজাব পরার বিষয়ে আপত্তি জানায় স্থানীয় ডানপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠী ও তাদের ছাত্র সংগঠন।

উদুপির এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের মান্দিয়া এবং শিভামোগগা এলাকায়। সেখানকার কলেজ কর্তৃপক্ষ হিজাব নিষিদ্ধ করে। যদিও আইনে হিজাব পরে মুসলিম ছাত্রীদের ক্লাসে আসতে কোনও বাধা নেই।

টিএম