তুরস্কের এস-৪০০ ইস্যুতে আগের নীতিতে বাইডেন প্রশাসন
রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এস-৪০০ ব্যবহারের ব্যাপারে আঙ্কারাকে নিজেদের মনোভাব জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার তৈরি এই সমরাস্ত্র ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। এর মাধ্যমে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন তুরস্কের এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপারে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিতে অটল থাকল।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জন কিরবি শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘(ট্রাম্প প্রশাসনের বিদায়ের পর) আমাদের নীতিতে পরিবর্তন আসেনি এবং আমরা আবারও তুরস্ককে এস-৪০০ ব্যবহার না করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিজ্ঞাপন
কিরবি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ন্যাটোর খুব গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে কাজ করে আসছে তুরস্ক। কিন্তু ন্যাটো সদস্য এবং একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ হিসেবে আঙ্কারার যে অঙ্গীকার রয়েছে তার সঙ্গে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত অসঙ্গতিপূর্ণ।’
উল্লেখ্য, ন্যাটো জোটভুক্ত প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার কাছ থেকে অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয় করেছে তুরস্ক। ২০১৭ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ক্রয়ের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে ৫২০ কোটি ডলারের চুক্তি করে দেশটি। ২০১৯ সলের জুলাই মাসে ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম চালান আঙ্কারাকে সরবরাহ শুরু করে মস্কো। এই প্রক্রিয়া এখনও চলছে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৭ সাল থেকেই রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ কেনার ব্যাপারে তুরস্ককে সতর্ক করে আসছে। ওয়াশিংটনের দাবি, এই চুক্তির মাধ্যমে তুরস্ক রাশিয়ার হাতে বিশাল অঙ্কের বাজেট তুলে দেওয়ার পাশাপাশি ন্যাটা জোটের সামরিক প্রযুক্তিকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
এরপরই গত বছরের শেষের দিকে তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে তুরস্কের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে এর প্রায় এক বছর আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়ে আসছিল ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, রাশিয়ার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য এস -৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ন্যাটোর নীতি-বিরোধী ও ইউরো-আটলান্টিক জোটের জন্য হুমকিস্বরূপ।
সেসময় তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জানিয়েছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে একাধিকবার জানিয়েছে, তারা যদি এস-৪০০ কেনেন, তাহলে সেটা মার্কিন সামরিক প্রযুক্তি ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চিন্তার কারণ হবে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা বাহিনী ও প্রতিরক্ষা শিল্পে রাশিয়া ঢুকে যাবে। রাশিয়ার হাতে প্রচুর অর্থ চলে যাবে। এ সবই অমেরিকার চিন্তার কারণ।’
পম্পেও আরও দাবি করেছিলেন, ‘তুরস্কের সামনে বিকল্প ব্যবস্থাও ছিল। ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো সেই বিকল্পই ব্যবহার করে। তবুও তুরস্ক এস-৪০০ সংগ্রহ ও পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তুরস্কের প্রেসিডেন্সি অব ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান ইসমাইল দেমির ও তার তিন সহকর্মীর ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়।
অবশ্য আমেরিকার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে তুরস্ক ও রাশিয়া। আঙ্কারা বলেছে, দেশটি কোনো অবস্থায় রাশিয়ার সঙ্গে করা এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি বাতিল করবে না।
সূত্র: রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড
টিএম