করোনার মাঝে নতুন উদ্বেগ
লাসা ভাইরাসে ব্রিটেনে ৩ মৃত্যু, মহামারির শঙ্কা
করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত বিশ্বে নতুন একটি ভাইরাসের বিস্তারের খবর উদ্বেগ তৈরি করেছে। লাসা ভাইরাস নামের এই ভাইরাস যুক্তরাজ্যে তিনজনের প্রাণ কেড়ে নেওয়ায় দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, এই ভাইরাসের ‘মহামারির সম্ভাবনা’ আছে।
১৯৮০’র দশকের পর থেকে যুক্তরাজ্যে লাসা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন মোট ৮ জন। এর মধ্যে সর্বশেষ দু’জনের এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল।
বিজ্ঞাপন
লাসা জ্বর কী?
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) মতে, এই ভাইরাসটি প্রাণীবাহিত এটি একটি প্রাণীবাহিত বা জুনোটিক। এটি তীব্র ভাইরাল অসুস্থতা তৈরি করে।
লাসা ভাইরাসের কারণে রক্তক্ষরণজনিত অসুস্থতা তৈরি হয়। এটি ভাইরাসের অ্যারেনাভাইরাস পরিবারের একটি সদস্য।
মানুষকে সংক্রমিত করে কীভাবে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, মানুষ সাধারণত সংক্রমিত ম্যাস্টোমিস প্রজাতির ইঁদুরের প্রস্রাব অথবা মলের সংস্পর্শে আসা দূষিত খাবার অথবা গৃহস্থালির জিনিসপত্রের মাধ্যমে লাসা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। পশ্চিম আফ্রিকার কিছু অঞ্চলের রডেনসিয়া বর্গের প্রাণীর মাঝে এই ভাইরাসটি টিকে আছে।
ডব্লিউএইচও এই রোগ সম্পর্কে বলেছে, মানুষ থেকে মানুষে এবং পরীক্ষাগারেও সংক্রমণও ঘটতে পারে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা স্থাপনায় পর্যাপ্ত সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
প্রথম কখন এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়?
১৯৬৯ সালে প্রথমবারের মতো এই ভাইরাসটি নাইজেরিয়ার লাসা শহরে শনাক্ত হয়। শারীরিক অসুস্থতা তৈরির জন্য দায়ী এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয় লাসা শহরের নাম অনুযায়ী।
সিডিসি বলছে, প্রত্যেক বছর সাধারণত এক লাখ থেকে ৩ লাখ পর্যন্ত মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং মারা যান প্রায় ৫ হাজার।
উপসর্গ কী?
একজন মানুষের দেহে এই ভাইরাসে সংক্রমণ ২ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, লাসা জ্বরের বেশিরভাগ সংক্রমণ মৃদু এবং অনেক সময় উপসর্গ বোঝা যায় না। এর সংক্রমণ ধীরে ধীরে জ্বর, সাধারণ দুর্বলতা এবং অসুস্থতা তৈরি করে। সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে রোগীর মাথাব্যথা, গলা ব্যথা, পেশীতে ব্যথা, বুকে ব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, কাশি এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।
লাসায় আক্রান্ত প্রত্যেক ১০ জনের মধ্যে ৮ জনেরই কোনও উপসর্গ দেখা যায় না। তবে লিভার, কিডনি প্রভাবিত হলে; লক্ষণ দেখা দেওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে মৃত্যু ঘটতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে প্রাণহানি না ঘটলেও বধির হয়ে যেতে পারেন।
চিকিৎসা কী?
যদি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা যায়, তবে রিহাইড্রেশন এবং উপসর্গগুলোর চিকিত্সাই বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তোলে। এছাড়া অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ রিবাভিরিন লাসা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে এটা কীভাবে কাজ করে তা এখনও জানা যায়নি। সংক্রমণ এড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় ইঁদুরের সংস্পর্শে না আসা।
সূত্র: এনডিটিভি।
এসএস