ছবি: এনডিটিভি

ভারতের সংবিধানে এমন কোনো আইন নেই, যা দেশটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব বা ধর্মীয় পোষাকের ক্ষেত্রে আপত্তি জানাতে পারে। সোমবার  ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটক হাইকোর্টের এক শুনানিতে আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী দেবদত্ত কামাত এই তথ্য জানিয়েছেন।

দেবদত্ত কামাত বলেন, ‘ভারতের সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানে কোথাও হিজাব বা ধর্মীয় পোষাককে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করা হয়নি।’

‘সুতরাং, হিজাবের বিপক্ষে সরকার যে অবস্থান নিয়েছে, তা সংবিধানসম্মত কিনা— তা প্রশ্নসাপেক্ষ; আর একটি বিষয় হলো— মুসলিম ছাত্রীরা কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য হিজাব পরেন না। তারা এটি ব্যবহার করেন তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সম্মান রেখে।’

কর্ণাটকে চলমান হিজাব আন্দোলন বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুগুলোর একটি। গত মাসে কর্ণটকের উদুপি জেলার একটি প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজের ছয় ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে ক্লাসে ঢুকতে বাধা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে এই সমস্যার সূত্রপাত ঘটে।

শ্রেণীকক্ষে হিজাব পরে ক্লাস করা যাবে কি না— তা নিয়ে ওই কলেজ কর্তৃপক্ষ ও মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে বিবাদ চলে, এর মধ্যেই উদুপির ওই কলেজের ছয় শিক্ষার্থীর শ্রেণীকক্ষের বাইরে বসে থাকার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় রাজ্যজুড়ে দানা বাঁধতে থাকে বিক্ষোভ।

অল্প সময়ের মধ্যে রাজ্যের অন্যান্য কিছু কলেজে হিন্দু শিক্ষার্থীরা গেরুয়া শাল পরে ক্লাসে আসতে শুরু করে। উভয় পোশাকই ক্যাম্পাসে পরা যাবে না, এমন নির্দেশনা জারি করতে বাধ্য হন কলেজ কর্মকর্তারা।

গত সপ্তাহে একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হিজাব পরা একদল ছাত্রীকে কলেজে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। উদুপি জেলার কুন্দাপুরের একটি প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এই ঘটনায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

কর্ণাটক ছাড়াও দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে হিজাব আন্দোলন।

একপর্যায়ে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। উদুপি সরকারি কলেজের ৫ জন নারী কর্ণাটক হাইকোর্টে শ্রেণীকক্ষে হিজাব নিষিদ্ধের বিপক্ষে পিটিশন দায়ের করেন।

এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি এই পিটিশনের ওপর শুনানি হয়েছিল। ওইদিন রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে হিজাব ও ধর্মীয় পোষাক পরে আসার ব্যাপারে স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন হাই কোর্ট। এ বিষয়ে শুনানিতে আদালত আরও বলেছিলেন, এটি একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ ও চুড়ান্ত আদেশ আসার আগ পর্যন্ত কর্ণাটকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এই নিয়ম বলবৎ থাকবে।

ওইদিন এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন হিসেবে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ধার্য করেছিলেন হাই কোর্ট। সেই অনুযায়ী সোমবার এ বিষয়ে শুনানি হলো। কর্ণাটক হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এই ইস্যুতে পিটিশনকারীদের পক্ষে লড়ছেন।

সূত্র: এনডিটিভি

এসএমডব্লিউ