ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটে পিজা হাট, কেএফসি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি নির্মাতা জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান হুন্দাই ও কেআইএর কয়েক ডজন দোকান এবং শোরুম বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী বজরং দল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)। কাশ্মীরের জনগণের প্রতি সমর্থন জানিয়ে করা এক টুইট ঘিরে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী এই দুই গোষ্ঠীর সদস্যরা গুজরাটে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদের দোকান এবং শোরুম বন্ধ করে দিয়েছে।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে হিন্দুত্ববাদী ওই দুই গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সুরাটে এক বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেওয়া ভিএইচপির কোষাধ্যক্ষ দীনেশ নবদিয়া বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এই সংস্থাগুলো ভারতে ব্যবসা করতে পারে না। একই সাথে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থানকেও সমর্থন জানাতে পারে না।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অন্যতম শক্ত ঘাঁটি গুজরাটের বজরং দল এবং ভিএইচপির শতাধিক সদস্য ওই সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। এ সময় তাদের অনেকে ‘কাশ্মীর আমাদের’ বলে স্লোগান দেন। এই দুই গোষ্ঠীর সদস্যদের পরনে গেরুয়া স্কার্ফ পরা ছিল।

সাম্প্রতিক এই উত্তেজনা প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান— উভয় দেশেই কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক ঝুঁকি বৃদ্ধি করেছে। উভয় দেশ কাশ্মীরের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ করলেও দুই কাশ্মীরের সম্পূর্ণ মালিকানারও দাবি করে।

বিজেপি কয়েক দশক ধরে ভারতের সংবিধানে নিশ্চিত করা ভারত-শাসিত কাশ্মীরের সীমিত স্বায়ত্তশাসনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিল। ২০১৯ সালের আগস্টে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করেন।

১৯৪৭ সালের এক চুক্তির আওতায় এই অঞ্চলের পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণের কথা ছিল নয়াদিল্লির। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে দিয়েছে ভারত।

স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কাশ্মীরে নাগরিক স্বাধীনতা পদদলিত এবং সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেফতারের অভিযোগ করেছে। কাশ্মীরিরা বলেছেন, নতুন যে আইন পাস করা হয়েছে, তা স্থানীয় জনগণের স্বার্থবিরোধী।

ভারত বলছে, ভারত-শাসিত কাশ্মীরে নয়াদিল্লির শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহে সমর্থন দিচ্ছে পাকিস্তান; যা ১৯৯০’র দশকে শুরু হয়েছিল। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা কেবলমাত্র কাশ্মীরি জনগণের প্রতি কূটনৈতিক এবং নৈতিক সমর্থন জানায়।

গুজরাটের বৃহত্তম শহর আহমেদাবাদ শাখার ভিএইচপির মুখপাত্র হীতেন্দ্রসিং রাজপুত বলেন, আমরা এসব সংস্থার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছি। কাশ্মীরের সমর্থনে এই সংস্থাগুলোর পাকিস্তানি সহযোগীদের টুইটের কারণে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা এসব কোম্পানির কাছে এটি পরিষ্কার করতে চাই যে, ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ কাশ্মীর।

কাশ্মীরের প্রতি সমর্থন জানিয়ে টুইট ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান তীব্র সমালোচনার মুখে হুন্দাই, কেআইএ, ডমিনোর পিজা, ইয়াম ব্র্যান্ডের পিজা হাট ও কেএফসি, জাপানের সুজুকি মোটর, হোন্ডা মোটর ও ইসুজু মোটর বিবৃতি প্রকাশ করে ভারতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই মোটর কোম্পানি বলেছে, কাশ্মীরের জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে তাদের পাকিস্তানি সহযোগীদের অ্যাকাউন্ট থেকে ‘অননুমোদিত’ যে টুইট করা হয়েছে, সে জন্য জন্য তারা গভীরভাবে অনুতপ্ত।

এসএস