ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই এক ডজনেরও বেশি দেশ তাদের নাগরিকদের ইউক্রেন ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে।

মূলত যেকোনো মুহূর্তে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করে বসতে পারে; পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো থেকে এমন হুঁশিয়ারি পেয়ে একের পর এক দেশ তাদের নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ার নির্দেশ দিচ্ছে। রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন থেকে নাগরিকদের ফিরে আসতে বলা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি আছে। যদিও ইউক্রেনে আক্রমণের ইচ্ছে থাকার কথা অস্বীকার করছে মস্কো। কিন্তু ইউক্রেনের সীমান্তে ইতোমধ্যেই প্রায় এক লাখ সৈন্য মোতায়েন করেছে দেশটি।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেন আক্রমণের চড়া মূল্য দিতে হবে রাশিয়াকে। অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলছেন, আক্রমণের যে হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে তা আতঙ্ক তৈরি করতে পারে এবং এই আতঙ্ককে তিনি ‘শত্রুদের প্রিয় বন্ধু’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন।

এদিকে হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, যেকোনো সময় ইউক্রেনে আক্রমণ হতে পারে, আকাশ থেকে বিমান হামলার মাধ্যমে এই আক্রমণ শুরু হতে পারে। রাশিয়া এই ধরনের অভিযোগকে ‘উসকানিমূলক অনুমান’ বলে চিহ্নিত করছে।

অগুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মার্কিন দূতাবাস ছাড়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রোববার থেকে কনস্যুলার সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। যদিও জরুরি অবস্থা বিবেচনায় ‘পশ্চিমের শহর লিভিভে ছোট পরিসরে’ কনস্যুলার সার্ভিস চালু রাখা হবে।

কানাডার গণমাধ্যমের খবর মতে, কানাডাও দূতাবাস কর্মীদের লিভিভে সরিয়ে আনছে, এই শহরটির সীমান্ত পোল্যান্ডের সাথে। ইউক্রেনে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত মেলিন্ডা সিমন্স টুইটে লিখেছেন, তিনি ও ‘কোর টিম’ অর্থ্যাৎ একান্ত যাদের প্রয়োজন তারাই কিয়েভে অবস্থান করছেন।

রাশিয়া নিজেরাও কিছু পরিবর্তন আনছে, ‘কিয়েভ শাসক বা তৃতীয় কোনো দেশের উসকানির’ জন্য তারা ইউক্রেনে নিজেদের কূটনীতিবিদদের যতটা প্রয়োজন ঠিক ততজন স্টাফ রাখবে। এছাড়া ইউক্রেনের বাইরে ইউক্রেনিয়ান সৈনিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ১৫০ জনের একটি বাহিনী যুক্তরাষ্ট্র সরিয়ে আনছে। ওয়াশিংটন বলছে, বাড়তি সতর্কতা হিসেবেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ডাচ মিডিয়ার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে কোনো ধরনের ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে ডাচ এয়ারলাইন কেএলএম। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলছেন, পশ্চিমা শক্তিগুলোর হাতে আসন্ন আক্রমণ নিয়ে কোনো সুনিশ্চিত প্রমাণ আছে কি না তিনি নিশ্চিত নন।

তার ভাষায়, ‘একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের সকল তথ্যই মনে হচ্ছে মিডিয়ার কাছে আছে। আমরা ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত, আমরা জানি ঝুঁকি আছে। যদি আপনার কাছে শতভাগ নির্ভরযোগ্য তথ্য থাকে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ নিয়ে, আমাদেরকে জানাতে পারেন।’

অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, ইসরায়েল, নেদারল্যান্ডস ও জাপান তাদের নাগরিকদের ইতোমধ্যেই ইউক্রেন ত্যাগ করতে বলছে। কোনো কোনো দেশ ইউক্রেনে তাদের কূটনৈতিক কর্মীদের পরিবারসহ সরিয়ে এনেছে।

ইউক্রেনে হামলা করলে রাশিয়াকে চড়া মূল্য দিতে হবে বলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সতর্ক করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে হামলার মতো কোনো পদক্ষেপ নিলে মস্কোকে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হবে এবং (সারা বিশ্ব) থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে। শনিবার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারি বাসভবন ক্রেমলিন জানিয়েছে, ফোনালাপে বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন- রাশিয়ার দাবি ও উদ্বেগগুলো বিবেচনায় নিতে ব্যর্থ হয়েছে ওয়াশিংটন এবং পূর্ব ইউরোপে সামরিক জোট ন্যাটোর সম্প্রসারণ এবং ইউক্রেনে সেনা মোতায়েনের মতো বিষয়গুলোসহ প্রধান প্রধান নিরাপত্তা ইস্যুগুলোতে ‘যথেষ্ট উত্তর’ পায়নি মস্কো।

ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় এক লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। এর মধ্যে ট্যাংক ও কামানসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়েছে দেশটি। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।

তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, যেকোনো মুহূর্তে ইউক্রেনে হামলা করে বসতে পারে রাশিয়া। হামলার আশঙ্কায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মার্কিন নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ারও নির্দেশ দিয়েছে ওয়াশিংটন। এই পরিস্থিতিতে শনিবার রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে এক ঘণ্টা ফোনে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

দীর্ঘ এক ঘণ্টার এই ফোনালাপে চলমান ইউক্রেন সংকট সমাধানের পথে কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেনি কোনো পক্ষই। বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উভয় প্রেসিডেন্টের মধ্যে এই ফোনালাপ ছিল পেশাদার এবং বাস্তবসম্মত। কিন্তু এর মাধ্যমে কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসেনি।

টিএম