মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান, ছবি: আলজাজিরা

রাশিয়া-ইউক্রেনের দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে ওই অঞ্চলের পরিস্থিতি ক্রমশ গুরুতর রূপ নিতে থাকায় ইউক্রেনে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশটি ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার।

স্থানীয় সময় শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ঠিক কোনদিন এবং কখন হামলা হবে- সে ব্যাপারে এই মুহূর্তে আমাদের হাতে কোনো তথ্য নেই, তবে হামলা যে ঘটবে- তার সম্ভবনা অতি স্পষ্ট এবং আমাদের ধারণা, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই কিয়েভে হামলা করার পরিকল্পনা করছে মস্কো।’

‘এই পরিস্থিতি ইউক্রেনে এখনও যেসব মার্কিন বেসামরিক নাগরিক অবস্থান করছেন, তাদেরকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন সরকার। যদি দেশ ত্যাগ করতে গিয়ে কোনো নাগরিক যানবাহন বা অন্য কোনো সমস্যায় পড়েন, সেক্ষেত্রে তিনি সেখানকার মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।’

‘আমরা কিন্তু বলছি না যে হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে। এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। আমরা শুধু বলছি—  সেখানকার পরিস্থিতি এখন যে রূপ নিয়েছে, তাতে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট অবকাশ আছে।’

‘যেহেতু ইউক্রেনের সার্বিক অবস্থা এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও হুমকির মধ্যে আছে, এ কারণে আমরা মনে করছি মার্কিন বেসামরিক নাগরিকদের জন্য দেশটি ত্যাগ করার এখনই উপযুক্ত সময়।’

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ইউক্রেনের সঙ্গে বরাবরই কূটনৈতিক জটিলতা ছিল রাশিয়ার। দেশটিতে রুশপন্থী সশস্ত্র বিদ্রোহীদের একাধিক গোষ্ঠী সক্রিয় এবং এসব গোষ্ঠী বরাবরই রাশিয়ার প্রতি অনুগত।

২০১৪ সালে এই গোষ্ঠীগুলোর সহায়তায়ই ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নিয়েছিল রাশিয়া।

তবে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সাম্প্রতিক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে দেশটি পাশ্চাত্যের দেশগুলোর সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনে (ন্যাটো) সদস্যপদ লাভের জন্য আবেদনকে ঘিরে; এবং তা আরও বেড়েছে ন্যাটোর ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে ইউক্রেনের স্বীকৃতি লাভের পর। কোনো দেশ যখন ন্যাটোর ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়, তার অর্থ হলো ওই দেশটি ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্র হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।

আর এটিই রাশিয়ার মাথা ব্যাথার মূল কারণ। ন্যাটো যদি পূর্ব ইউরোপে তৎপর হয়, সেক্ষেত্রে ক্রিমিয়া নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়া প্রায় অবধারিত।

রাশিয়ার আর একটি উদ্বেগের কারণ হলো কৃষ্ণ সাগর, যা দেশটির একমাত্র জলপথ। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্র হলে এই পথে ন্যাটোর আনাগোনা বাড়বে, যা একেবারেই চায় না রাশিয়া।

১৯৪৯ সালে গঠিত ন্যাটোকে রাশিয়া বরাবরই পাশ্চাত্য শক্তিসমূহের আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে মনে করে; এবং ঐতিহাসিকভাবেই বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়া পাশ্চাত্য আধিপিত্যবাদের বিরোধী।

গত ডিসেম্বর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তে প্রায় ১ লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছে রাশিয়া। সম্প্রতি জানা গেছে, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে দখল করা ক্রিমিয়া দ্বীপের বিভিন্ন এলকায়ও সেনা উপস্থিতি বাড়াচ্ছে দেশটি।

এদিকে, সীমান্তে রুশ সেনা মোতায়েনের পর থেকেই এ বিষয়ে ব্যাপকভাবে সরব হয়ে উঠেছে ন্যাটোর নেতৃত্বদানকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রায় প্রতিদিনই বলছেন— রাশিয়া যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা করতে পারে।

যদি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করে, সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও রুশ সরকারকে কঠিন মূল্য দিতে হবে বলে বার বার হুঁশিয়ারিও দিচ্ছেন বাইডেন।

মস্কো যদিও বলেছে, ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা রাশিয়ার নেই— কিন্তু তাতে একেবারেই আস্থা রাখতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ।

তবে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ— সব পক্ষই একমত যে এই সংকটের সুরাহা এখনও কূটনৈতিকভাবে হওয়া সম্ভব। শনিবার এই ইস্যুতে ভার্চুয়াল বৈঠকেও বসবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

এর মধ্যে অবশ্য গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ায় গিয়ে এ বিষয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ন্যাটোর অন্যতম সদস্যরাষ্ট্র ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ; কিন্তু সেই বৈঠকে মূল সংকট যে কাটেনি— তা স্বীকার করেছেন ম্যাক্রোঁ নিজেই।  

সূত্র: আলজাজিরা

এসএমডব্লিউ