বসফরাস প্রণালী পার হয়ে ভূমধ্যসাগর থেকে কৃষ্ণ সাগরে প্রবেশ করছে রাশিয়ার নৌবাহিনীর জাহাজ

ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে সমুদ্র অবরোধ এবং সাগরে প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে ইউক্রেন।

এমনিতেই বেলারুশের সাথে সামরিক মহড়া শুরু করেছে রাশিয়া। আগামী সপ্তাহে নৌ মহড়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে মস্কো। পাল্টা মহড়া চালাচ্ছে ইউক্রেনও। উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতির মধ্যেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের সমুদ্র অবরোধের অভিযোগ তুলল কিয়েভ। শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা জানিয়েছেন, আজভ সাগর থেকে ইউক্রেনকে সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ এবং কৃষ্ণ সাগরেও প্রায় পুরোপুরি ভাবে দেশটিকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে রুশ সামরিক বাহিনী।

ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় এক লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। এর মধ্যে ট্যাংক ও কামানসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়েছে দেশটি। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।

তবে এর মধ্যেই প্রতিবেশী দেশ বেলারুশের সঙ্গে সামরিক মহড়া শুরু করেছে রাশিয়া। বেলারুশ দীর্ঘদিন ধরেই মস্কোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে কাজ করছে এবং ইউক্রেনের সঙ্গে দেশটির বিশাল সীমানাও রয়েছে।

বিবিসি বলছে, আগামী সপ্তাহে আজভ সাগর এবং কৃষ্ণ সাগরে নৌ মহড়া চালাবে রাশিয়া। এই দু’টি সাগরই ইইক্রেনের দক্ষিণে অবস্থিত। মহড়াকে সামনে রেখে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং গোলাগুলির বিষয়ে উপকূলীয়ও সতর্কতাও জারি করেছে রাশিয়া।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আজভ সাগর এবং কৃষ্ণ সাগরের বিশাল এলাকাজুড়ে নৌ মহড়া চালানো হলে সেখানে বাস্তবিক ভাবেই সাধারণ নৌ চলাচলকে অসম্ভব করে তুলবে। এছাড়া টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভ জানিয়েছেন, আজভ সাগর এবং কৃষ্ণ সাগরের বিশাল আন্তর্জাতিক পানিসীমা অবরোধ করেছে রাশিয়া।

এদিকে ইউক্রেনের সমুদ্রসীমা অবরোধ নিয়ে মুখ খুলেছে যুক্তরাষ্ট্রও। টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ইউক্রেনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, ‘সামরিক মহড়ার অজুহাতে ইউক্রেনের সামুদ্রিক সার্বভৌমত্ব নিয়ন্ত্রণ করছে রাশিয়া। একইসঙ্গে কৃষ্ণ সাগর ও আজভ সাগরে নৌ চলাচলের স্বাধীনতা লঙ্ঘন এবং ইউক্রেনের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক যান চলাচলেও বাধা দিচ্ছে মস্কো।’

অন্যদিকে পূর্ব ইউরোপে উত্তেজনার মধ্যেই ইউক্রেনে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে দেশটি ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলার ক্রমবর্ধমান হুমকির’ কারণে বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন এই নির্দেশনা জারি করে।

মার্কিন নাগরিকদের উদ্দেশে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর জানায়, ‘রাশিয়ার হামলার ক্রমবর্ধমান হুমকি এবং করোনা মহামারির কারণে ইউক্রেনে এখন কেউ ভ্রমণ করবেন না। আর যারা এখন ইউক্রেনে অবস্থান করছেন তাদের অবিলম্বে বাণিজ্যিক বা ব্যক্তিগত উপায়ে দেশটি ত্যাগ করা উচিত।’

এছাড়া মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে ইউক্রেন ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন খোদ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই আহ্বান জানান।

পূর্ব ইউরোপে সম্ভাব্য বড় ধরনের সংঘর্ষের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সাক্ষাৎকারে জো বাইডেন বলেন, ‘মার্কিন নাগরিকদের এখনই (ইউক্রেন) ত্যাগ করা উচিত। আমরা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ একটি সামরিক বাহিনীর মোকাবিলা করছি। এটি পুরোপুরি আলাদা একটি ব্যাপার এবং পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয়ে যেতে পারে।’

অবশ্য ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে রাশিয়া।

টিএম