ইউক্রেনে যুদ্ধ অনিবার্য?
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ অথবা অন্য শহর দখলে নিতে সীমান্তে রাশিয়ার এখন পর্যাপ্ত সৈন্য রয়েছে। তবে দেশটি পুরোপুরি দখলে নেওয়ার জন্য সীমান্তে জড়ো করা মস্কোর সৈন্য সংখ্যা এই মুহূর্তে যথেষ্ট নয়। রাশিয়ার সঙ্গে গত কয়েক সপ্তাহের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে রোববার ইউক্রেনের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রি জ্যাগোরোদনিউক এসব কথা বলেছেন।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের এই সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, পরিস্থিতি ‘বেশ ভয়াবহ’ আকার ধারণ করেছে। রাশিয়া এখন ইউক্রেনের যেকোনও শহর দখলে নিতে পারে। কিন্তু পুরোদমে আক্রমণ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ২ লাখ সৈন্য আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি না।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেন সীমান্তে ক্রেমলিনের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসনের আশঙ্কা প্রকাশের পর এসব মন্তব্য করেছেন আন্দ্রি। শনিবার হোয়াইট হাউস বলেছে, ফেব্রুয়ারির মাঝের দিকে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালানোর জন্য ভ্লাদিমির পুতিনের যে সামরিক সক্ষমতা দরকার তার প্রায় ৭০ শতাংশ ইউক্রেন সীমান্তে ঘটানো হয়েছে।
পুরোমাত্রার আক্রমণে অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ রাশিয়া দখল করতে পারে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়েছেন। তারা বলেছেন, রাশিয়ার এই আগ্রাসনে ইউক্রেনে ২৫ থেকে ৫০ হাজার বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে।
তারা বলেছেন, বর্তমানে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়ার কৌশলগত ৮৩টি ব্যাটালিয়ন অবস্থান নিয়েছে। এর প্রত্যেকটি ব্যাটালিয়নে ৭৫০ থেকে এক হাজার সৈন্য রয়েছে। দুই সপ্তাহ আগেও এই ব্যাটালিয়নের সংখ্যা ছিল ৬০।
গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রি বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা অনিবার্য বলে বিশ্বাস করেন না তিনি। উত্তাপহীন রুশ সৈন্যদের সীমান্তে সমাবেশ পাঠ্যপুস্তকীয় প্রক্রিয়া মেনে করা হয়েছে। তবে ক্রেমলিনের উদ্দেশ্য এবং কৌশল এখনও অস্পষ্ট।
তিনি বলেন, আমরা এখানে রাজনীতির শেষ খেলা দেখতে পাচ্ছি না। পুতিন যদি কিয়েভ দখলে নেন, তাহলে পুরোমাত্রার যুদ্ধ হবে। ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যরা লড়াই করবেন। তারা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। কিন্তু কেন সেটা করা হবে?
ইউক্রেনের সাবেক এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ইউক্রেন বলতে যাচ্ছে না যে, চলো রাশিয়ায় যোগ দিই। এটা বোঝা যায়। পুতিন অবশ্যই একেবারে বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন এবং বাস্তবতা সম্পর্কে তার নিজস্ব বোঝাপড়া আছে। সেখানে রক্তপাত হবে, নিষেধাজ্ঞা আসবে। ইউরোপে এই মুহূর্তে কারও এ ধরনের আন্তর্জাতিক যুদ্ধের দরকার নেই।’
আন্দ্রি বলেন, রাশিয়ার পরিকল্পনা এবং সক্ষমতার ব্যাপারে মার্কিন প্রশাসনের প্রকাশিত গোয়েন্দা তথ্যের সত্যতা আছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা রাশিয়া সামরিক আক্রমণের অজুহাত হিসাবে ভুয়া ভিডিও বানিয়ে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাতে পারে বলে দাবি করেন। এদিকে, ইউক্রেনে হামলা চালাতে রাশিয়া ভুয়া অজুহাত তৈরি করতে পারে বলে ব্রিটেনও একই ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
ইউক্রেনের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, হামলার এই ষড়যন্ত্র বাইরের বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মস্কো এর আগেও একই ধরনের ‘মিথ্যা অজুহাত’ দেখিয়ে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিল।
আগামী বৃহস্পতিবার থেকে বেলারুশের সামরিক বাহিনীর সাথে বড় ধরনের সামরিক মহড়া শুরু করবে রাশিয়া। বেলারুশ থেকে ইউক্রেনে অভিযান পরিচালনার দূরত্ব উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন, রাশিয়া ৩০ হাজার কমব্যাট সৈন্য, অভিজাত স্পেৎসনাজ শাখার সদস্য, এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে।
বর্তমানে ইউক্রেন সীমান্তে এক লাখ ৩৫ হাজার সৈন্য সমাবেশ করেছে রাশিয়া। তারা দেশটির পূর্বাঞ্চলের ডনবাস অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থান করছে, যেখানে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী প্রায় আট বছর ধরে মস্কোপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে।
রাশিয়া ২০১৪ সালে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে দখলে নেওয়া দক্ষিণের ক্রিমিয়া উপকূলের দিকেও সৈন্য সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া পশ্চিমে মলদোভার পাশের বিচ্ছিন্ন প্রজাতন্ত্র ট্রান্সনিস্ত্রিয়াতেও সৈন্য সমাবেশ করেছে ক্রেমলিন।
শনিবার মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়া অন্যান্য অঞ্চল থেকেও কৌশলগত অন্তত ১৪টি সামরিক ব্যাটালিয়নকে ইউক্রেনের সীমান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তবে দেশটিতে পুরোমাত্রার আক্রমণের জন্য ক্রেমলিন ১১০ থেকে ১৩০টি ব্যাটালিয়ন ব্যবহার করতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র ধারণা করছে। পুতিন সীমিত সৈন্য ব্যবহার করেও আক্রমণ চালাতে পারেন বলে জোর দিয়েছে ওয়াশিংটন।
সহায়ক ইউনিটসহ রাশিয়া পূর্ণমাত্রার সামরিক আক্রমণের জন্য দেড় লাখ সৈন্য ব্যবহারের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে বলে মার্কিন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রাশিয়া এই সৈন্য সমাবেশের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
ইউক্রেনের পশ্চিমাপন্থী প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভূমিধস জয় পাওয়ার পর আন্দ্রি জ্যাগোরোদনিউককে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করেন। যদিও পরবর্তীতে তিনি সরকার ত্যাগ করেন। ইউক্রেনের সাবেক এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী বর্তমানে সেন্টার ফর ডিফেন্স স্ট্র্যাটেজিজ নামের একটি থিঙ্কট্যাংক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন।
তিনি বলেন, রাশিয়া বেলারুশেও সৈন্য সংখ্যা বাড়িয়েছে। তারা সম্ভাব্য আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আমার প্রধান উদ্বেগ কিয়েভের জন্য।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।
এসএস