১০৪ ফুট গভীর কুয়ায় পড়ে যাওয়া সেই শিশুর জীবনের করুণ সমাপ্তি
উদ্ধারকর্মীদের প্রাণপণ চেষ্টা সত্ত্বেও মরক্কোর কুয়ায় চারদিন ধরে আটকে থাকা পাঁচ বছরের শিশু রায়ানের জীবনের করুণ সমাপ্তি হয়েছে। শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে যখন রায়ানকে উদ্ধার করা হয়, ততক্ষণে সে মারা গেছে।
মরক্কোর একটি ১০৪ ফুট গভীর কুয়ার ভেতরে আটকে পড়া শিশু রায়ানকে উদ্ধার অভিযানের সময় হাজার হাজার মানুষ সেখানে ভিড় করেছিলেন। সারা দেশের মানুষ তার জন্য প্রার্থনা করছিল, অনলাইনেও এই উদ্ধার কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রেখেছিলেন লাখ লাখ মানুষ। সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারকারীরা হ্যাশট্যাগ #SaveRyan ব্যবহার করে তার প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
রায়ানের পিতা গত মঙ্গলবার যখন কুয়াটি মেরামতের কাজ করছিলেন তখন সে হঠাৎ করে ৩০ মিটার (১০৪ ফুট) গভীরে পড়ে যায়। সেদিন সন্ধ্যা থেকেই দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় ছোট শহর তামরতে উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়। কুয়াটির ভেতর বালু ও পাথর থাকায় ধসের আশঙ্কায় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছিল।
শনিবারই উদ্ধার কর্মীরা জানিয়েছিলেন, তারা রায়ানের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন। যদিও সেই সময় তার অবস্থা সম্পর্কে কোন তথ্য জানানো হয়নি। তখন সেখানে ভিড় করা জনতা উল্লাস প্রকাশ করেছিলেন। তারা ধর্মীয় গান গেয়ে তার জন্য প্রার্থনা করছিলেন। অনেকে সেখানে তাঁবু গেড়েও বাস করছিলেন।
কিন্তু একটু পরেই স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় রায়ানের মরদেহ কুয়ার ভেতর থেকে বের করে আনা হলে সবকিছু নীরব হয়ে পড়ে। রায়ানের মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন মরক্কোর রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ।
বৃহস্পতিবারও এই কুয়ার ভেতরে একটি ভিডিও ক্যামেরা প্রবেশ করিয়ে রায়ানের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন উদ্ধারকর্মীরা। সেদিন তাকে জীবিত এবং সজ্ঞান রয়েছে বলে দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এরপর থেকেই তার বিষয়ে আর কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
উদ্ধারকর্মীরা তার জন্য অক্সিজেন, খাবার এবং পানি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সে সেগুলো ব্যবহার করতে পেরেছিল কি না, তা পরিষ্কার নয়।
বালু এবং পাথর বোঝাই থাকার কারণে উদ্ধারকর্মীরা কুয়ার সরু মুখ দিয়ে প্রবেশে করতে পারছিলেন না। তার বদলে কুয়াটির কাছাকাছি বুলডোজার ব্যবহার করে আরেকটি নালা তৈরি করে আড়াআড়িভাবে শিশুটির অবস্থানের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়। শক্তিশালী ফ্লাডলাইট ব্যবহার করে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করেছিলেন উদ্ধারকর্মীরা।
বালক রায়ানকে উদ্ধারের কাজে সহযোগিতা করেছিলেন স্থানীয় একজন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ইয়ানি কোয়াহাবি। তিনি বলেছেন, কুয়াটি সরু হওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়েছিল। তিনি আরও জানান, স্থানীয় অনেক স্বেচ্ছাসেবী ও উদ্ধারকর্মীরা বার বার কুয়ার নিচে নামার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
তার ভাষায়, ‘সমস্যা হলো কুয়াটি খুব সরু। এর ব্যাস মাত্র ২৫ সেমি (৯.৮ ইঞ্চি)। কুয়ার ২৮ মিটার গভীরে গিয়ে এটি আরও বেশি সরু হয়ে গেছে। ফলে আমরা তার কাছে পৌঁছাতে পারিনি।’
উদ্ধারকারী দলের একজন বলেন, ‘আমরা যতোই তার কাছে যাচ্ছি, কুয়াটি ততোই সরু হয়ে যাচ্ছে। সেখান দিয়ে আরও নিচে নামা কঠিন। একারণে আমরা একটা গর্ত করে ভেতরে নামার চেষ্টা করেছিলাম।’
টিএম