ন্যাটোর বাইরে কাতার আমাদের প্রধান মিত্র: বাইডেন
মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় দেশ কাতারকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (ন্যাটো) বাইরে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে মনে করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
খুব শিগগিরই মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে বলে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সোমবার হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে কাতারের আমির করে শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জো বাইডেন। এ সময় কাতারকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভালো বন্ধু ও বিশ্বস্ত অংশীদার’ হিসেবে উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি কংগ্রেসকে জানাব যে, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সম্মান জানিয়ে কাতারকে আমি ন্যাটোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রের আনুষ্ঠানিক মর্যাদা দিতে চাই। আসলে অনেক আগেই আমার এই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।’
পরে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র যখন কোনো দেশকে ন্যাটোর বাইরে প্রধান মিত্র হিসেবে ঘোষণা করে, তার অর্থ হলো ওই দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আমরা গভীরভাবে সম্মান করি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসে এই বিষয়টি উত্থাপন করতে ইতোমধ্যে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে চিঠিও দিয়েছেন বাইডেন।
মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে এই স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে কাতার। এর আগে কাতারের প্রতিবেশী দেশ কুয়েতকে ‘ন্যাটোর বাইরে প্রধান মিত্র’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথম ওয়াশিংটনে গেলেন কাতারের আমির; এবং এমন এক সময়ে তাদের বৈঠক হলো, যখন পূর্ব ইউরোপের দেশ ও ন্যাটোর সহযোগী সদস্য ইউক্রেন প্রশ্নে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যাপক উত্তেজনা চলছে যুক্তরাষ্ট্রের।
গত সপ্তাহেই অবশ্য ভার্চুয়াল মাধ্যমে ‘বৈশ্বিক জ্বালানী সরবরাহ বিষয়ক স্থিতিশীলতা’ নিয়ে শেখ তামিমের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বাইডেনের। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপে অধিকাংশ জ্বালানী গ্যাসের চাহিদা আসে রাশিয়া থেকে। ইউক্রেন প্রশ্নে যদি সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে রাশিয়া, সেক্ষেত্রে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে দেশটি। তখন বিশাল বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে ইউরোপ।
এক সপ্তাহ আগের বৈঠকটি হয়েছিল এই নিয়েই। বিশ্বের যেসব দেশে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত আছে, সেসবের মধ্যে কাতার অন্যতম এবং যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, রাশিয়া যদি কখনও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়- তাহলেও যেন ন্যাটোর মিত্র দেশসমূহ কোনো সমস্যায় না পড়ে।
বৈঠকে আফগানিস্তানে তালেবানগোষ্ঠীর ক্ষমতা দখলের পর দেশটি থেকে মানুষ প্রত্যাহারে কাতারের সহযোগিতা ও হামাস ও ইসরায়েলি সেনবাহিনীর সংঘাতের পর ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক সহায়তা উপকরণ পাঠানোর জন্য শেখ তামিমকে ধন্যবাদ দেন বাইডেন।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে। কাতারের সরকারি বিমান পরিষেবা সংস্থা কাতার এয়ারওয়েজের জন্য বিমান কিনতে মার্কিন বিমান প্রস্তুত প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সঙ্গে ২০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করেন শেখ তামিম; আর এই চুক্তিকে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছেন বাইডেন।
সূত্র: আলজাজিরা
এসএমডব্লিউ