স্টেশনের ভিক্ষুক থেকে ক্যাফেটেরিয়ার মালিক এই তরুণী
চোখ খুলতেই ছোট্ট মেয়েটি দেখেছিল সে রেল স্টেশনে পড়ে রয়েছে। কে তার বাবা-মা, কোথায় তার বাড়ি কিছুই মনে ছিল না তার। দিশেহারা হয়ে স্টেশনে ঘুরতে দেখায় এক ভিক্ষুক দম্পতি মেয়েটিকে তাদের সঙ্গে নিয়ে যায়। দম্পতির সঙ্গে ছোট্ট মেয়েটিও স্টেশনে ভিক্ষা করতো। সেই মেয়েটিই এখন একটি ক্যাফেটেরিয়ার মালিক।
ব্যতিক্রমী এই ঘটনার সাক্ষী ভারতের বিহার রাজ্যের রাজধানী পাটনা। আর ওই তরুণীর নাম জ্যোতি। পাটনা রেলওয়ে স্টেশনেই ভিক্ষা করতেন তিনি। সোমবার (৩১ জানুয়ারি) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া.কমে সাফল্যের ব্যতিক্রমী এই তথ্য উঠে এসেছে।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯ বছর বয়সী তরুণী জ্যোতি পটনা শহরে এখন তিনি বেশ পরিচিত একটি মুখ। শৈশবেই বাবা-মা পাটনা স্টেশনে জ্যোতিকে ফেলে গিয়েছিলেন। তাকে অসহায় হয়ে কাঁদতে দেখে ওই স্টেশনেরই এক ভিক্ষুক দম্পতি জ্যোতিকে নিজেদের কাছে রাখেন।
স্টেশন চত্বরে আর পাঁচ জন এতিম শিশুর মতোই বড় হচ্ছিলেন জ্যোতি। কোনো দিন খাবার জুটতো, কোনো দিন আবার কিছুই জুটতো না। এভাবেই দিন কাটছিল তার। কিন্তু জ্যোতি কিছু একটা করার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন সেই সময় থেকেই।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, পড়াশোনার প্রতি জ্যোতির খুব ঝোঁক ছিল। কিন্তু তার মতো এক জন এতিম, ভিখারির সেই স্বপ্ন কি পূরণ হবে, সেটা ভেবেই হতাশায় ডুবে যেতেন জ্যোতি। কিন্তু তার এই সাধ পূরণে অনেকেই এগিয়ে আসেন। তার দত্তক মা-বাবাও মেয়ের ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যান।
অবশেষে ভাগ্য সদয় হয় জ্যোতির। পাটনা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জ্যোতির বিষয়ে জানতে পারে একটি বেসরকারি সংস্থা। সেই সংস্থার উদ্যোগেই জ্যোতি পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু এর মধ্যেই মারা যান জ্যোতির দত্তক মা।
ছোট থেকে যে কষ্টের মধ্যে দিয়ে তার জীবন কেটেছে, সেই দিনগুলো যেন জীবনে ফিরে না আসে এই সংকল্প নিয়েই পড়াশোনাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন জ্যোতি। মাধ্যমিক পাশ করেছেন ভালো নম্বর নিয়ে। এখন তার ঠিকানা আর পাটনা রেলওয়ে স্টেশন নয়। শহরেই নিজে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, পাটনা স্টেশনের কাছে একটি ক্যাফেটেরিয়াও চালান জ্যোতি। সেই ক্যাফেটেরিয়ার মালিক ১৯ বছরের এই তরুণী নিজেই।
জ্যোতি জানিয়েছেন, সামনে তিনি মার্কেটিং নিয়ে পড়াশোনা করতে চান। তাই ক্যাফেটেরিয়া চালানোর ফাঁকে ফাঁকে নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে পরিশ্রম করে চলেছেন এই তরুণী।
টিএম