ইউক্রেন : রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের কথার লড়াইয়ে জাতিসংঘে উত্তাপ
ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘে উত্তপ্ত কথার লড়াইয়ে জড়িয়েছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় এক লাখ রুশ সেনা মোতায়েন নিয়ে সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সরব হয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে এদিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে একটি বৈঠকের ডাক দেয়। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দূত কথার লড়াইয়ে জড়ান।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড জানান, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া যে পরিমাণ সৈন্য জড়ো করেছে তা কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপ আর দেখেনি। অন্যদিকে রুশ দূত অভিযোগ করেন, সৈন্য সমাবেশের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করছে এবং রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। এটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় এক লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।
ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা বরাবরই বলে আসছে যে, পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে হামলা হলে তারা রাশিয়ার অর্থনীতিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে। এছাড়া ইউক্রেনে হামলা হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেজ্ঞা আরেপের হুঁশিয়ারি বরাবরই দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রাশিয়ার দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া জানান, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনা করছে এমন কোনো প্রমাণ কারও কাছে নেই এবং ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েনের বিষয়টিও জাতিসংঘের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, রাশিয়া নিজের ভূখণ্ডের মধ্যে প্রায়ই সেনা সমাবেশ করে থাকে এবং এ বিষয়ে ওয়াশিংটনের মাথা ঘামানোর কিছু নেই। বাইডেন প্রশাসন বক্তব্য, বিবৃতি ও প্ররোচণার মাধ্যমে উত্তেজনা বৃদ্ধি করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রুশ দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, এটি কেবল রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপই নয়, এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও ভুল বোঝানো হচ্ছে। ইউক্রেন ও পূর্ব ইউরোপের চলমান সত্যিকার পরিস্থিতি নিয়েও ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।
এসময় রাশিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত অধিবেশনের আলোচনা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে রাশিয়ার আপত্তি ১০-২ ভোটে বাতিল হয়ে যায়।
অন্যদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, চলমান সংকটের কূটনৈতিক সমাধান আছে বলে সবসময় বিশ্বাস করে ওয়াশিংটন। তবে রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা করেই বসে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর জবাব দেবে। এর ফলাফল হবে খুবই ‘ভয়াবহ’।
তিনি আরও বলেন, ‘গত কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপে এটিই সবচেয়ে বড় সৈন্য সমাবেশের ঘটনা। এবং রাশিয়া সেখানে যোগ দেওয়ার জন্য আরও সেনা ও অস্ত্র পাঠাচ্ছে।’
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ও রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেন কয়েক বছর আগে ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকেই উত্তেজনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় আরও বেড়েছে এই উত্তেজনা।
১৯৪৯ সালে গঠিত হওয়া নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অরগ্যানাইজেশনকে (ন্যাটো) রাশিয়া বরাবরই পাশ্চাত্য শক্তিসমূহের আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে মনে করে; এবং ঐতিহাসিকভাবেই বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়া পাশ্চাত্য আধিপত্যবাদের বিরোধী।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো বলছে, পশ্চিমা সামরিক জোটে ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন এবং অন্যান্য ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা চালায়, তাহলে এই হামলাই প্রথম হয়ে থাকবে না।
টিএম