আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের বহু সংখ্যক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তালেবান। এছাড়া দেশটির সাবেক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং বিদেশি সামরিক বাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করা ব্যক্তিরাও তালেবানের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে বলে সোমবার (৩১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। বার্তাসংস্থাটি জাতিসংঘের ওই রিপোর্ট দেখেছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে দেওয়া সংস্থাটির মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের ওই রিপোর্টে আফগানিস্তানের ক্রমবর্ধমান খারাপ পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গত বছরের আগস্ট মাসে তালেবান গোষ্ঠী কাবুলের ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ জনসংখ্যার এই দেশটিতে কার্যত অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকট আরও বেড়েছে।

প্রতিবেদনে গুতেরেস বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের জটিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।’

২০ বছর পর গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান দখলে নেয় তালেবান। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তালেবান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়। অবশ্য সরকার গঠন করলেও বিশ্বের কোনো দেশই এখনও পর্যন্ত তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এর জেরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থাও আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তাসহ অর্থ সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়।

ফলে দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট প্রতিদিনই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এছাড়া তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের আগে থেকেই বিদেশি সহায়তার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল আফগানিস্তানের অর্থনীতি। আগস্ট থেকে সেই সহায়তা আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক ও মানবিক সংকট কেবলই বেড়েছে।

গত বছরের আগস্টে তালেবানের ক্ষমতাগ্রহণ এবং একে একে সকল বিদেশি সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার পর দেশটির মানবিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বহুবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। নিরাপত্তা পরিষদকে দেওয়া তার সর্বশেষ এই রিপোর্টেও আফগানিস্তান নিয়ে তার সেসব হুঁশিয়ারি স্থান পেয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সংকট মোকাবিলায় আফগানিস্তানে নতুন একটি মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ ইউনিট তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন আন্তেনিও গুতেরেস। এর পাশাপাশি যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই দেশটিতে জাতিসংঘের মিশন পুনর্গঠনের একটি প্রস্তাব অনুমোদন করতেও নিরাপত্তা পরিষদের কাছে সুপারিশ করেছেন তিনি।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত আগস্টে ক্ষমতা গ্রহণের পর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিল তালেবান। কিন্তু এরপরও আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের কর্মকর্তা, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনীর সহায়তাকারী ব্যক্তিদের হত্যা, জোরপূর্বক উঠিয়ে নেওয়াসহ নির্যাতনের নানা বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ অব্যাহত ভাবেই পাচ্ছে জাতিসংঘ মিশন।

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, গত বছরের ১৫ আগস্ট কাবুলের ক্ষমতা দখলের পর থেকে এরকম শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশকে তালেবান ও তাদের সহযোগীরা হত্যা করেছে বলে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে বলে মনে করে জাতিসংঘ।

এছাড়া আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের স্থানীয় শাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে কমপক্ষে ৫০ জন তালেবানের হাতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে বলেও বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিবেদনে গুতেরেস আরও বলেছেন, ‘এছাড়া মানবাধিকার কর্মী ও গণমাধ্যম কর্মীরা অব্যাহতভাবে হামলা, হুমকি, হয়রানি, নির্বিচারে আটক, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন।’

টিএম