রোগী করোনা টিকা নেননি, হার্টের অপারেশন করল না হাসপাতাল
করোনাভাইরাস মহামারি প্রতিরোধে কোভিড-১৯ টিকার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক বৈশ্বিক বড় বড় সংস্থাগুলো সবাইকেই টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। তবে এরপরও বহু মানুষই করোনা টিকার বিরোধিতা করছেন।
তবে করোনা টিকা না দেওয়ায় এক ব্যক্তির সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, তা নিশ্চয় সবার হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। করোনা টিকা না নেওয়ায় গুরুতর অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও ওই ব্যক্তির হার্টের অপারেশন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এমনকি হাসপাতাল থেকে তাকে ফিরিয়েও দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন শহরের একটি হাসপাতালে। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে হার্টের জটিল সমস্যায় ভুগছেন ৩১ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক ডিজে ফার্গুসন। আর তাই হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট করাতে সম্প্রতি তিনি বোস্টন শহরের ব্রিগহাম অ্যান্ড উইমেন’স হসপিটালে গিয়েছিলেন। কিন্তু রোগীর শারীরিক অবস্থার থেকে সেখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ফার্গুসনের করোনা টিকা না নেওয়ার বিষয়টি।
করোনা মহামারি প্রায় দুই বছর পার করতে চললেও ফার্গুসন এখনও টিকা নেননি। কারণ তিনি করোনা টিকায় বিশ্বাস করেন না। রোগী ফার্গুসনের কাছ থেকে এমন যুক্তি পেয়ে অবাক হয়েছিলেন চিকিৎসকরা। আর তাই মুমূর্ষূ এই রোগীকে বিনা চিকিৎসায় ফিরতে হলো হাসপাতাল থেকে। যদিও প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে শরীরে নতুন একটি হার্ট সংযোজন করা ফার্গুসনের জন্য খুবই প্রয়োজন।
ফার্গুসনের বাবা ডেভিড সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তার ছেলে করোনার টিকা নেয়নি। কারণ ফার্গুসন ভ্যাকসিনে বিশ্বাস করে না। এটি তার বেসিক প্রিন্সিপালের (মৌলিক নীতির) বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে বোস্টনের ব্রিগহাম অ্যান্ড উইমেন’স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তারা তাদের নিয়ম ও নীতি মেনেই কাজ করেছে। করোনা টিকা না নিলে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে না।
বিবিসি’র কাছে দেওয়া এক বিবৃতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, করোনা টিকা রোগীর নিজের জন্যই ভালো। টিকা নেওয়া থাকলে হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টে সফল হওয়ার সুযোগও বেশি থাকে। এছাড়া চাহিদার তুলনায় প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গের সংকট রয়েছে। তাই তারা কোনো ঝুঁকি নিতে চান না। কারণ অঙ্গের সংকট এতোটাই যে, ঝুঁকি নিয়ে কোনো অঙ্গ নষ্ট করতে চায় না হাসপাতাল।
ব্রিগহাম অ্যান্ড উইমেন’স হাসপাতালের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে চাওয়া রোগীদের সফল অপারেশনের জন্য করোনা টিকা এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দু’টি বিষয় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য এক লাখ রোগী হাসপাতালের অপেক্ষমান তালিকায় রয়েছেন। তবে প্রয়োজনীয় অঙ্গের সংকটের কারণে অপেক্ষমান তালিকায় থাকা রোগীদের বেশিরভাগই আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করাতে সক্ষম হবেন না।
উল্লেখ্য, হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য গত বছরের ২৬ নভেম্বর থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ডিজে ফার্গুসন। তিনি বংশগত ভাবেই হার্টের সমস্যায় ভুগছেন এবং এই রোগের কারণে ফার্গুসনের ফুসফুস রক্ত ও নানা তরল পদার্থে পূর্ণ হয়ে যায়।
টিএম