স্বেচ্ছায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে সংগীতশিল্পীর মৃত্যু
স্বেচ্ছায় করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ইউরোপের দেশ চেক রিপাবলিকের এক লোক সংগীতশিল্পী মারা গেছেন। তিনি করোনা টিকার বিরোধী ছিলেন এবং নিজের ইচ্ছায় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃত ওই সংগীতশিল্পীর ছেলের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, করোনায় মারা যাওয়া চেক রিপাবলিকের ওই লোক সংগীতশিল্পীর নাম হানা হরকা। ৫৭ বছর বয়সী এই শিল্পী করোনার টিকা নেননি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠছিলেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় নিজেই জানিয়েছিলেন হানা। তবে এর দু’দিন পর তিনি মারা যান।
বিজ্ঞাপন
হানা হরকার ছেলে জ্যান রেক বলছেন, তিনি ও তার বাবা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তার মা হানা স্বেচ্ছায় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মূলত থিয়েটারসহ নির্দিষ্ট কিছু ভেন্যুতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পাস নেওয়ার জন্য তিনি স্বেচ্চায় করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন।
অবশ্য জ্যান রেক ও তার বাবা আগেই করোনা টিকার ডোজ সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু ক্রিসমাসের সময় তারা করোনায় আক্রান্ত হন। কিন্তু ছেলের দাবি, তিনি ও তার বাবা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তার মা দূরে থাকতে চাননি। স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে থাকতে তিনি নিজেও বরং ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পথই বেছে নেন।
জ্যান রেক বলেন, ‘আমরা করোনা পজিটিভ হওয়ার পর এক সপ্তাহ আমাদের থেকে তার দূরে থাকা উচিত ছিল। কিন্তু তিনি পুরো সময়টিই আমাদের সাথে ছিলেন।’
বিবিসি বলছে, ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো চেক রিপাবলিকেও করোনার সংক্রমণ সম্প্রতি অনেক বেড়েছে। বুধবারও দেশটিতে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর তাই সেখানে করোনার বিধিনিষেধও অনেক কঠোর।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিনেমা হল, বার ও ক্যাফেসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চেক রিপাবলিকে টিকার সনদ অথবা সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন এমন প্রমাণ দেখাতে হবে। আর হানা হরকা যেহেতু টিকা নেননি তাই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সেসব অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার শর্ত পূরণ করতেই হয়তো স্বেচ্ছায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
জ্যান রেক বলছেন, তার মা হানা হরকা অ্যাসোন্যান্স নামক একটি চেক লোকসঙ্গীত ব্যান্ডের কণ্ঠশিল্পী ছিলেন। এই ব্যান্ডটি চেক রিপাবলিকের পুরোনো ব্যান্ডগুলোর একটি। একবার করোনায় আক্রান্ত হলে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের ওপর বিধিনিষেধ অনেকটাই কমে যাবে, এ কারণেই ভাইরাসে সংক্রমিত হতে চেয়েছিলেন তার মা।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠছিলেন বলে নিজেই জানিয়েছিলেন হানা হরকা। তবে গত রোববার তিনি মারা যান। অবশ্য রেক তার মায়ের মৃত্যুর জন্য স্থানীয় ভ্যাকসিন বিরোধী আন্দোলনকে দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের নেতারা আমার মাকে টিকা নেওয়ার বিরুদ্ধে রাজি করিয়েছিলেন। এটা দুঃখজনক যে, তিনি তার পরিবারের চেয়ে অপরিচিতদের বেশি বিশ্বাস করেছিলেন।’
বুধবার চেক রিপাবলিকে ২৮ হাজার ৪৬৯ জনের শরীরে নতুন করে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। মহামারি শুরুর পর থেকে দেশটিতে এবারই প্রথম একদিনে এতো সংখ্যক মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন।
বিবিসি বলছে, চেক রিপাবলিকের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৩ শতাংশ মানুষ এখন পর্যন্ত করোনা টিকার ডোজ সম্পন্ন করেছেন। আর পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নে এই সংখ্যা ৬৯ শতাংশ।
টিএম