উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন : মমতাকে দেখিয়ে ভোট টানার চেষ্টা

প্রতিবেশি ভারতের রাজনীতিতে এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন। ১০ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে মোট সাত দফায় অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। ১০ মার্চ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বিপদ বাড়ছে ক্ষমতাসীন বিজেপির। একাধিক মন্ত্রীসহ বেশ ক’জন বিধায়ক বিজেপি ছেড়েছেন। এ পরিস্থিতিতে যোগী আদিত্যনাথ তার মসনদ ধরে রাখতে পারবেন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
উত্তরপ্রদেশের এই নির্বাচনে বিজেপিকে হারানো কার্যত স্বাধীনতা পাওয়ার চেয়েও বেশি কিছু হবে বলে মন্তব্য করেছেন পিডিপি নেত্রী ও জম্মু-কাশ্মিরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। আবার বিজেপিবিরোধী শক্তি হিসেবে নির্বাচনী প্রচারে উত্তরপ্রদেশ যাবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নির্বাচনে বিজেপির জন্য সবচেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছে সমাজবাদী পার্টি (সপা)। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি লখনউতে সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদবের সঙ্গে যৌথ ভার্চুয়াল সভা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সমাজাবাদী পার্টির নেতা কিরণময় নন্দ জানিয়েছেন, উত্তর প্রদেশ নির্বাচনে কোনো আসনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দেবে না বলে তাকে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সব আসনেই সপাকে সমর্থন দেবে তৃণমূল।
এরআগে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে তৃণমূলকে সমর্থন দিয়েছিল সমাজবাদী পার্টি।
কিরণময় নন্দ আরও বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন শুধু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নন, শুধু তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী নন, বাংলায় ২০২১ সালের নির্বাচনের পর তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে জাতীয় মুখ হয়ে উঠেছেন। আমরা এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে একসঙ্গে হারাতে চাই, মানুষকে এই বার্তা দেওয়াই লক্ষ্য।
উত্তর প্রদেশে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সমাজবাদী পার্টির সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে দাবি করে তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালে বাংলার নির্বাতনে মমতার সাফল্যে বিজেপি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে। তিনি উত্তর প্রদেশে প্রচারে গেলে আমাদের কর্মীরা তো বটেই, উত্তর প্রদেশে বিজেপিবিরোধী বিপুল সংখ্যক মানুষও উদ্বুদ্ধ হবেন।
মমতার তৃণমূল কংগ্রেস বরাবরই বলে এসেছে, যে রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে যারা শক্তিশালী, তাদেরই সমর্থন করবে তারা।
এদিকে ভোটের আগে টাইমস নাউ যে সমীক্ষা চালিয়েছে তাতে বলা হচ্ছে, নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টিসহ বাকিদের পেছনে ফেলবে যোগীর দল। সমাজবাদী পার্টির জোট পেতে পারে, ১৩৬ থেকে ১৫১টি আসন। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস ভোটে ৬ থেকে ১১টি আসন পেতে পারে।
হাইভোল্টেজ এই বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী পদ ঘিরেও হয়েছে সমীক্ষা। টাইমস নাউয়ের ওপিনিয়ন পোল বলছে, যোগী আদিত্যনাথ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তার পক্ষে ভোট গেছে ৫৩.৪ শতাংশ।
স্বাধীনতা পাওয়ার চেয়েও বেশি
পিডিপি নেত্রী ও জম্মু-কাশ্মিরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলছেন, দেশে কোথাও কোনো নির্বাচন এলেই বিজেপির আওরঙ্গজেব, বাবরকে আক্রমণ করার কথা মনে পড়ে। শেষ পাঁচ বছরে উত্তরপ্রদেশে কোনো উন্নয়ন তারা করতে পারেনি। এবারে আমাদের সবার সামনে সুযোগ এসেছে যে, আমরা বিজেপিকে উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে পারব। আর যদি আমরা এই কাজটা করতে পারি তাহলে তা ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা পাওয়ার চেয়েও বড় আজাদি হবে।
তিনি আরও বলেন, এই পাঁচবছরের উত্তরপ্রদেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য একটা হাসপাতালও বানাতে পারেনি বিজেপি। শুধু বাইরের লোকদের নিয়ে এসে সেখানে জায়গা ও কাজ দিচ্ছে এবং সেটাকেই উন্নয়ন বলে চালানোর চেষ্টা করছে। আমি ওদের (বিজেপিকে) জিজ্ঞেস করেছি কোথায় উন্নয়ন হয়েছে দেখাও! সে সব কিছুই করেনি ওরা উল্টো দেশের ভিত্তি যে ধর্মনিরপেক্ষতা সেটাকেই নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছে। হিন্দু মুসলিম বিভেদ বাড়াচ্ছে। তাই ওদের সরাতে পারলে তা স্বাধীনতার চেয়ে বড় জিনিসই হবে।
সূত্র : নিউজ এইট্টিন ও ওয়ান ইন্ডিয়া।
এনএফ