দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপরাষ্ট্র টোঙ্গায় সমুদ্রের তলদেশে বিশাল অগ্ন্যুৎপাত ও সুনামির কারণে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার একটা ধারণা পেতে সেখানে বিমান পাঠিয়েছে নিউজিল্যান্ড।

অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ছাইয়ে ঢেকে গেছে পুরো দ্বীপ, বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট (আইএফআরসি) বলছে, ৮০ হাজার মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হতে পারে।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন বলছেন, সুনামিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। অনেক ক্ষেত্রেই সেখানকার প্রকৃত অবস্থা কী তা জানা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে নিউজিল্যান্ডের পাশাপাশি বিমান পাঠাচ্ছে অস্ট্রেলিয়াও।

ফিজির আইএফআরসি থেকে বলা হচ্ছে, জরুরি-ভিত্তিতে সেখানে সাহায্য প্রয়োজন। আমাদের ধারণা সরাসরি অগ্ন্যুৎপাত বা তা থেকে সৃষ্ট সুনামির কারণে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে।

স্থানীয় সময় শনিবার সমুদ্রের তলদেশে ওই অগ্ন্যুৎপাতের কারণে সেখানকার আকাশ আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে ঢেকে যায় এবং ৪ ফুট উচ্চতার সুনামির আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করা হয়।  অগ্ন্যুৎপাতে বিস্ফোরণের শব্দ এতটা জোরালো ছিল যে তা ২ হাজার ৩৮৩ কিলোমিটার দূরবর্তী নিউজিল্যান্ড থেকেও শোনা গেছে। 

রোববার নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, সেখানকার পানিতে প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা মিশে যাচ্ছে, তাই সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। 

কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের কেবল বোতলজাত পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছে এবং ফুসফুসের সুরক্ষায় ফেস মাস্ক পরে থাকতে বলেছে। অগ্ন্যুৎপাতে পরপরই একদিকে যেমন টোঙ্গার আকাশ ছাইয়ে ঢেকে অন্ধকার হয়ে যায়, অন্যদিকে মানুষের ছোটাছুটিতে যানজট তৈরি হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেখানকার ইন্টারনেট ও টেলিফোন লাইন বিকল হয়ে যায়। এতে দ্বীপটির ১ লাখ ৫ হাজার বাসিন্দা কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

টোঙ্গা আবহাওয়া এজেন্সি সতর্ক করে দিয়েছে, কোনো কোনো অঞ্চলে সালফার এবং অ্যামোনিয়ার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আর্ডার্ন বলছেন, কিছু কিছু অংশে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরে আসছে এবং মোবাইল ফোনও কাজ করতে শুরু করছে। কিন্তু উপকূলীয় কিছু কিছু অংশের কী অবস্থা তা এখনও জানা যাচ্ছে না। 

টোঙ্গায় বাস করা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের অনেকে। ফাতিমা নামে একজন বলছেন, টোঙ্গার রাজধানী নুকু’আলোফাতে একটি রেস্তোরাঁ চালানো সহকর্মীদের কোনো খবরই তিনি পাননি।

তিনি আরও বলেন, এর প্রভাব খুবই কঠিন হবে। এমনিতেই লকডাউনের কারণে সেখানে বহুদিন কোনো পর্যটক যেতে পারেননি, আর তার মধ্যে এখন আবার এ অবস্থা হলো। 

স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি দেখে ধারণা করা হচ্ছে, আশপাশের কিছু কিছু দ্বীপ সমুদ্রের পানিতে সম্পূর্ণ ডুবে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক দশকের মধ্যে এটা এই আগ্নেয়গিরির সবচেয়ে বড় অগ্ন্যুৎপাত। এই অগ্ন্যুৎপাতের কারণে জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রেও সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। 

সূত্র : বিবিসি।

এনএফ