সামরিক বিমান থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বোমা হামলার মুখে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী নদীর তীরে আশ্রয় নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। সেখানে অস্থায়ী তাঁবু টানিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। সেনাবাহিনীর ভয়ে বাড়ি ফিরতে না পেরে থাইল্যান্ডের নদীর তীরবর্তী এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মিয়ানমারের এই বাসিন্দারা।

গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির প্রতিরোধ যোদ্ধাদের তীব্র লড়াই চলছে। অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক বাস্তুচ্যুত অথবা নিহত হয়েছেন।

মিয়ানমারের অনেক বাসিন্দা প্রতিবেশী থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু সেখানকার শরণার্থী শিবিরের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় অনেকে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় ফিরছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাস্তুচ্যুতদের আরও বেশি সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

শুক্রবার থাইল্যান্ডের মোয়ে নদীর পাশে রয়টার্সের প্রতিনিধিরা দেখেছেন, প্রায় ২ হাজার পুরুষ, নারী এবং শিশু ত্রিপলের নিচে অবস্থান নিয়েছেন। মোয়ে নদীর তীরে অন্তত পৃথক চারটি স্থানে তাঁবুর নিচে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।

থাইল্যান্ডের সীমান্তে ভালো ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন মিয়ানমারের বাসিন্দারা

ত্রাণের খাবার এবং পানির বোতল নিতে নদী পেরিয়ে থাইল্যান্ডের সীমান্তে আসা ৪২ বছর বয়সী সাবাল ফিউ বলেন, ‘থাইল্যান্ডের সীমান্তে আমরা ভালো ত্রাণ সহায়তা পেয়েছি। কিন্তু সেখানে প্রচণ্ড ভিড় এবং জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে এখানে আমাদের স্বাধীনতা বেশি।’

তিনি বলেন, চার সন্তান এবং স্বামীকে নিয়ে প্রথম দিকে নদী পেরিয়ে থাইল্যান্ডে গিয়েছিলেন তিনি। থাইল্যান্ডের মায়ে সোত শহরের কাছে একটি গবাদিপশু রাখার খালি ঘরে অন্যান্য শরণার্থীদের সঙ্গে তাদের গাদাগাদি করে রাখা হয়েছিল। ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস বলছে, বর্তমানে থাইল্যান্ডে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে মিয়ানমারের প্রায় ৮ হাজার শরণার্থী অবস্থান করছেন।

এ বিষয়ে জানতে রয়টার্স টেলিফোন করলেও মিয়ানমারের সামরিক সরকারের মুখপাত্র কোনও সাড়া দেননি। থাইল্যান্ডের আশ্রয় শিবিরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে থাইল্যান্ড সরকারের মুখপাত্র রাৎচাদা ধানাদিরেক বলেন, তার দেশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী ‘দায়িত্ব পালন’ এবং ‘শরণার্থীদের দেখাশোনা’ করছে।

শুক্রবার জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, শরণার্থীদের আশ্রয় নেওয়ার স্থান মায়ে সোত শহরে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি থাইল্যান্ডের সরকার। এমনকি মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায়ও প্রবেশের অনুমতি পায়নি ইউএনএইচসিআর।

স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স এসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স বলছে, গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর সামরিক বাহিনী ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি বেসামরিক এবং বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছে। তবে নিহতের এই সংখ্যা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করছে বলে দাবি করেছে জান্তা।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস