স্পেনে যাওয়ার পথে এক বছরে সাগরে হারিয়ে গেছেন সাড়ে ৪ হাজার অভিবাসী
বিপজ্জনকভাবে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপের দেশ স্পেনে পাড়ি জমাতে গিয়ে এক বছরে সমুদ্রের গভীরে হারিয়ে গেছেন প্রায় সাড়ে চার হাজার অভিবাসী। এর মধ্যে বহুসংখ্যক শিশুও রয়েছে। অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা স্প্যানিশ একটি সংস্থা সোমবার (৩ জানুয়ারি) এই তথ্য সামনে আনে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা স্প্যানিশ ওই সংস্থার নাম ওয়াকিং বর্ডারস। মানবাধিকার এই সংস্থাটি ক্যামিনাডো ফ্রন্টিরাস নামেও পরিচিত। সোমবার সংস্থাটি জানিয়েছে, বিপজ্জনকভাবে সমুদ্র পার হয়ে স্পেনে পাড়ি জমাতে গিয়ে ২০২১ সালে ৪ হাজার ৪০০-র বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী সাগরে হারিয়ে গেছেন। বিপুল সংখ্যক এই অভিবাসন প্রত্যাশীর মধ্যে কমপক্ষে ২০৫ জন শিশুও রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
স্প্যানিশ এই সংস্থাটির দাবি, ২০১৮ সাল থেকে সাগরে হারিয়ে যাওয়া অভিবাসীদের হিসেব রাখা শুরুর পর ২০২১ সালেই প্রথম এতো বিপুল সংখ্যক মানুষের সাগরে হারিয়ে যাওয়ার সংখ্যা রেকর্ড করেছে তারা। এছাড়া সংস্থাটির হিসেব অনুযায়ী, উন্নত জীবনের আশায় স্পেনে আসতে গিয়ে ২০২১ সালে হারিয়ে যাওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা স্প্যানিশ এই সংস্থাটির দাবি, উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপে আসতে ক্রমবর্ধমানভাবে বিপজ্জনক রুট ও নিম্নমানের নৌকা ব্যবহার এবং গভীর সমুদ্রে বিপদাপন্ন অভিবাসীদের সহায়তায় এগিয়ে যেতে কিছু জাহাজের অনিচ্ছার করণেই গত বছর সাগরে প্রাণহানি বেড়েছে।
স্পেনের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে নথিপত্রহীন ৩৯ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী সাগর ও স্থলপথে স্পেনে পৌঁছেছে। ২০২০ সালেও এই সংখ্যাটি ছিল অনেকটা একই রকম।
ওয়াকিং বর্ডারস বলছে, ২০২০ সাল থেকে সদ্য সমাপ্ত বছরের ডিসেম্বরের ২০ তারিখ পর্যন্ত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে স্পেনে পৌঁছাতে গিয়ে প্রাণ হারানো বা নিখোঁজ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি আটলান্টিক মহাসাগরের স্প্যানিশ দ্বীপ ক্যানারি আইল্যান্ডে পৌঁছাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।
গত এক বছরে স্পেনে পৌঁছাতে আফ্রিকার উপকূলে অবস্থিত এই দ্বীপটিই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রধান গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে একই সময়কালে এর থেকে অনেক কমসংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে স্পেনের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন।
মানবাধিকার সংস্থা ক্যামিনাডো ফ্রন্টিরাস-এর প্রতিষ্ঠাতা হেলেনা ম্যালেনো গারজন রয়টার্সকে জানিয়েছেন, গভীর সমুদ্রে বিপদাপন্ন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সাহায্য প্রদানের জন্য নির্ধারিত হটলাইন নাম্বারে ফোনকল এবং নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে তারা এই পরিসংখ্যান দাঁড় করিয়েছেন।
রয়টার্স বলছে, অভিবাসীবোঝাই দুর্ঘটনাকবলিত প্রতিটি নৌকার বিষয়ে তদন্ত করেছে ওয়াকিং বর্ডারস। যেসব অভিবাসী সমুদ্রে কমপক্ষে একমাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন, সংস্থাটির হিসেবে তাদেরকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়। আর সংস্থাটির হাতে থাকা প্রায় ৯৫ শতাংশ সংখ্যাই নিখোঁজ থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বরের ২২ তারিখ পর্যন্ত স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছানোর জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনকভাবে সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারানো ও নিখোঁজ থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা ৯৫৫ জন। ২০১৪ সালের পর থেকে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ।
স্পেন অবশ্য সমুদ্রে ডুবে প্রাণ হারানো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের হিসেব রাখে না। আর সর্বশেষ এই পরিসংখ্যানের বিষয়ে স্প্যানিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।
টিএম