দক্ষিণ আফ্রিকায় সংখ্যালঘু শেতাঙ্গ শাসনের বিরুদ্ধে সুর চড়ানো প্রবীণ লড়াকু, বর্ণবাদ অবসান আন্দোলনে সুচিন্তিত রসবোধ তৈরি, অনুপ্রেরণামূলক বার্তা আর নাগরিক-মানবাধিকারের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত শান্তিতে নোবেলজয়ী আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু মারা গেছেন। রোববার কেপটাউনে ৯০ বছর বয়সে থেমে গেছে আফ্রিকার এই অদম্য লড়াকুর জীবন।

আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী একজন স্পষ্টভাষী নেতা ছিলেন; যিনি সারা বিশ্বে মানুষকে বসতে এবং তার বক্তৃতা শুনতে বাধ্য করেছিলেন।

টুটুর স্মরণীয় কিছু উক্তি

• আপনার আওয়াজ বাড়াবেন না। বরং আপনার যুক্তিকে আরও শানিত করুন। 

• আমাদের নদী থেকে লোকজনকে টেনে তোলা বন্ধ করতে হবে। আমাদের উজানে যেতে হবে এবং খুঁজে বের করতে হবে কেন তারা পানিতে পড়ছে।

• আঁধারের মধ্যেও যে আলো আছে তার আশা দেখা যাচ্ছে।

• ক্ষমা ছাড়া কোনও ভবিষ্যৎ নেই।

• আপনি যেখানে আছেন, সেখান থেকে সামান্য হলেও ভালো কিছু করুন। এটি সেই সামান্য কিছু ভালো জিনিস; যা বিশ্বকে আচ্ছন্ন করে ফেলে।

• আমি চুপ থাকতে পারতাম, কিন্তু আমি পারি না এবং আমি চুপ থাকতে পারবো না।

শেতাঙ্গ শাসনবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম এক আইকন

বিশ্ববিখ্যাত বর্ণবাদবিরোধী নেতা ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার সমসাময়িক ছিলেন ডেসমন্ড টুটু। ১৯৪৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দেশটিতে যে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন চলেছে, তাতে অন্যতম চালকের আসনে ছিলেন তিনি। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে শান্তির নোবেল পুরস্কারও পান এই ধর্মযাজক।

চলতি বছরের অক্টোবর থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে ডেসমন্ড টুটুর। তখন থেকেই হুইল চেয়ারে চলাচল শুরু করেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্কের মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ পর টুটুর মৃত্যুর খবর এল। ক্লার্ক ১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯৪ সালের মে পর্যন্ত দেশটির শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু সরকারের প্রধান ছিলেন।

১৯৬০ সালে ধর্মযাজক হিসেবে স্বীকৃতি পান ডেসমন্ড টুটু। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিবেশী দেশ লেসোথোর যাজক (বিশপ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তারপর জোহানেসবার্গে ফিরে আসেন তিনি। ১৯৮৫ সালে উচ্চতর যাজক (আর্চবিশপ) পদ লাভ করেন ডেসমন্ড টুটু। তিনি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আর্চবিশপ।

১৯৯৪ সালে নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দেশটিতে শেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে সুসম্পর্ক জোরদার করতে যে ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করেছিলেন, তার প্রধান ছিলেন ডেসমন্ড টুটু।

টুটুকে ‘আইকনিক আধ্যাত্মিক নেতা, বর্ণবাদবিরোধী কর্মী ও বৈশ্বিক মানবাধিকার আন্দোলনের সৈনিক’ অ্যাখ্যা দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট রামাফোসা বলেছেন, ‘তিনি এমন এক দেশপ্রেমিক ছিলেন, যার সমতুল্য কেউ নন; ছিলেন নীতি ও বাস্তবিক পরিস্থিতির সমন্বয়কারী এক নেতা, যিনি বাইবেলের গূঢ়কথার অর্থ হাজির করেছিলেন এই বলে যে, কর্ম ছাড়া বিশ্বাস মৃত।’

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস