ফাইল ছবি

ইউরোপে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের হুমকি দিয়েছে রাশিয়া। সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) দেশটি জানিয়েছে, সামরিক জোট ন্যাটো ইউরোপে শক্তিবৃদ্ধি করলে মস্কোও মধ্যম পাল্লার পারমাণবিক মিসাইল মোতায়েনে বাধ্য হতে পারে। মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপে পরমাণু অস্ত্র মোতায়েনের বিষয়ে সোমবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। এসময় ইউরোপে নতুন অস্ত্র মোতায়েনের ঝুঁকি নিয়েও কথা বলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হয়েছে তিন দশক আগে। তবে ইউক্রেন ইস্যুতে স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পূর্ব ও পশ্চিমের এই দুই পরাশক্তির মধ্যে সম্পর্ক বর্তমানে সবচেয়ে তলানিতে পৌঁছেছে। গত মার্চে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে খুনি বলেও মন্তব্য করেছিলেন।

মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, সাইবার হামলা, ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে নজিরবিহীন অবনতির মধ্যেই এবার খোদ ইউক্রেনে রুশ হামলার আশঙ্কায় সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনা।

এই পরিস্থিতিতে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর মাধ্যমে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানায় ওয়াশিংটন। যদিও প্রেসিডেন্ট পুতিন বরাবরই দাবি করে আসছেন যে, ইউক্রেনে হামলা চালাবে না রাশিয়া।

সোমবার রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেন, ঐতিহাসিক ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) নামক স্থগিত থাকা একটি চুক্তিতে পশ্চিমা দেশটি যোগ দিতে না চাইলে রাশিয়া ইউরোপে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনে বাধ্য হবে। রয়টার্স বলছে, এর মাধ্যমে ইউক্রেন ইস্যুতে উত্তেজনা কমানোর মাধ্যমে মূলত একগুচ্ছ নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চায় মস্কো।

যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৮৭ সালে ঐতিহাসিক ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। সেই সময় দুই পরাশক্তি সম্মত হয়েছিল যে, তারা তাদের পারমাণবিক ক্ষমতা সম্পন্ন সব মিসাইল ধ্বংস করে ফেলবে।

একইসঙ্গে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার দূরে আঘাত হানার ক্ষমতা সম্পন্ন মিসাইলগুলো স্থায়ীভাবে অকেজো করে ফেলা হবে। কারণ ছোট আকারের, সহজে বহনযোগ্য এবং সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুতে সহজে আঘাত হানতে সক্ষম এসব অস্ত্রকে চরম হুমকি হিসাবে দেখা হতো।

চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৯১ সালের জুন মাসের যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সবমিলিয়ে ২ হাজার ৬৯২টি স্বল্পপাল্লার, মধ্যম পাল্লার এবং আন্তঃমহাদেশীয় মিসাইল ধ্বংস করে। অবশ্য সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরও রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তির অধীনেই নিজেদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিল। তবে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০১৯ সালে আইএনএফ থেকে বেরিয়ে যায় ওয়াশিংটন।

রাশিয়ার বার্তাসংস্থা আরআইএ’কে রিয়াবকভ আরও বলেন, সংকটের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সমাধান না হলে রাশিয়া সামরিক পথে এগিয়ে যাবে। কার্যত সামরিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এগিয়ে যাবে।

ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। দেশটির সীমান্তে রুশ বাহিনী সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে বলে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অভিযোগ করে আসছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা। এমনকি গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও দাবি করেছেন রুশ সামরিক বাহিনী ২০২২ সালের শুরুর দিকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে পারে।

সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইউক্রেন সীমান্তের চারটি স্থানে রাশিয়ার সেনা, ট্যাংক ও কামানের সমাবেশ ঘটানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। বর্তমানে সীমান্তে ৯৪ হাজার রুশ সেনা মোতায়েন রয়েছে, যা এক লাখ ৭৫ হাজারে উন্নীত হতে পারে।

টিএম