বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ১৩ মাস আগে ভারতের রাজধানী দিল্লির সীমান্তে যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন কৃষকরা, কেন্দ্রীয় সরকার দাবি মেনে নেওয়ায় দীর্ঘ সেই আন্দোলনের সমাপ্তি টানছেন তারা। খবর এনডিটিভি অনলাইনের।

বৃহস্পতিবার কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া মঞ্চ সংযুক্ত কিষান ইউনিয়ন (এসকেএম) নেতৃবৃন্দের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, আগামী ১১ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে তারা বিজয়ের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রার্থনা করবেন। তারপর সকাল ৯ টার দিকে বিজয় মিছিল নিয়ে দিল্লির সিংঘু ও টিকরি প্রদক্ষিণ করবেন- যে দুই এলাকায় গত ১৩ অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেছেন তারা।

তারপর তারা যে যার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হবেন।

২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দেশের কৃষি ব্যবস্থার সংস্কারে ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় তিনটি বিল উত্থাপন করে বিজেপি সরকার। বিরোধী দলের আইনপ্রণেতাদের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজেপি এমপিতের কণ্ঠভোটে পাস হয়ে এসব বিল।

বিলগুলোতে কৃষিপণ্যের মজুতদারীর ওপর সীমা তুলে নেওয়া, কোম্পানি ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক চাষ এবং উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস—এমএসপি) তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।

সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ওই বিল তিনটি আইনে পরিণত হয়। নভেম্বর থেকে এই আইনগুলো বাতিলের দাবিতে দিল্লির সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর কয়েক লাখ কৃষক।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদিও বলেছেন, দেশের বিস্তৃত ও মান্ধাতা আমলের কৃষি ব্যাবস্থাকে ঢেলে সাজানো ও আধুনিকায়নই নতুন তিন কৃষি আইনের উদ্দেশ্য, কিন্তু তার এই বক্তব্যে আস্থা ছিল না আন্দোলনরত কৃষকদের।

তারা বক্তব্য ছিল, ওই তিন আইনের ফলে বেসরকারি নানা বড় বড় কোম্পানি কৃষিখাতে হর্তাকর্তা হয়ে যাবে এবং দরিদ্র কৃষকরা ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়ান পরিবর্তে উল্টো তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়বেন।

প্রায় এক বছর অনড় অবস্থানে থাকার পর শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) অনেকটা আকস্মিকভাবেই বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিল ঘোষণা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ বিষয়ক এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘এই তিনটি কৃষি আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল কৃষকের মঙ্গলের জন্য। আমাদের লক্ষ্য সৎ ছিল; কিন্তু কৃষি আইনের সুফলের কথা কিছু কৃষককে আমরা বোঝাতে পারিনি।’

ওই ভাষণে আন্দোলনের পথ ছেড়ে কৃষকদের আবার কৃষিকাজে ফিরে যেতেও অনুরোধ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

কিন্তু তার মৌখিক ভাষণে আস্থা রাখতে পারছিলেন না এসকেএম নেতারা। মঞ্চের অন্যতম নেতা রাকেশ টিকায়েত প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর বলেছিলেন, শুধু প্রধানমন্ত্রীর মৌখিক ঘোষণায় নয়, পার্লামেন্টেও এই তিন কৃষি আইন বাতিল ঘোষণা করতে হবে । তার আগ পর্যন্ত কৃষকরা আন্দোলন ছেড়ে যাবে না।

সম্প্রতি ভারতের পার্লামেন্টেও বাতিল হয়েছে এই তিন কৃষি আইন।

এসএমডব্লিউ