প্রথম ডোজে ফাইজার কিংবা অ্যাস্ট্রাজেনেকার নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজে মডার্নার টিকা নেওয়া ব্যক্তিরা টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করার অন্যান্যদের চেয়ে করোনা থেকে বেশি সুরক্ষা ভোগ করেন। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য জানা দেছে।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সম্প্রতি ১ হাজার ৭০ জন স্বেচ্ছাসেবকের ওপর একটি মেডিকেল ট্রায়াল পরিচালনা করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। স্বেচ্ছাসেবকদের তিনটি দলে ভাগ করে প্রথম দলকে দুই ডোজে দেওয়া হয় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা, দ্বিতীয় দলকে দুই ডোজে দেওয়া হয় ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা।

তৃতীয় দলটিকে প্রথম ডোজে ফাইজার বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হলেও দ্বিতীয় ডোজে দেওয়া হয় মডার্নার টিকা। ট্রায়ালের শেষে দেখা যায়, যারা দুই ডোজেই ফাইজার বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন, তাদের তুলনায় দুই ডোজে ভিন্ন টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের দেহে করোনা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির পরিমাণ বেশি।

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাথিউ স্ন্যাপ রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন,

আমরা যা বলতে চেয়েছি, তা হলো- আপনি প্রথম ডোজে যে টিকা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজেও একই টিকা নিতে হবে- এমন কোনো কথা নেই। যদি কোনো দেশের টিকাদান কর্মসূচিতে দুই ডোজে ভিন্ন ভিন্ন টিকা দেওয়া হয়- সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষদের কোনো সমস্যা নেই, বরং লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

ম্যাথিউ স্ন্যাপ বলেন, যারা প্রথম ডোজে অ্যাস্ট্রাজেনেকা কিংবা ফাইজারের করোনা টিকা নিয়েছেন, তারা দ্বিতীয় ডোজে মডার্নার টিকা নিলে দেহে করোনা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি ও টিসেলের পরিমাণ ও সংখ্যা দুটোই বৃদ্ধি পায় বলে গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন তারা।

দুই ডোজে দুই কোম্পানির টিকা নিলে শারীরিক কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়- এমন কোনো তথ্যও তারা পাননি। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেটে তাদের গবেষণা প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে সম্প্রতি।

ইতোমধ্যে অবশ্য অনেক দেশে সরকারি ভাবেই জনগণকে মিশ্র টিকার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। জার্মানি, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়ামসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ আছে এই তালিকায়। এছাড়া ইউরোপের বাইরের অনেক দেশও নাগরিকদের মিশ্র টিকার ডোজ দিচ্ছে।

মূলত টিকার ডোজের সংকটের কারণেই ইউরোপের দেশগুলো প্রথম জনগণকে দেওয়া শুরু করে মিশ্র টিকার ডোজ। পরে গবেষণায় দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একই টিকায় দুই ডোজ সম্পূর্ণ করা ব্যক্তিদের চেয়ে দুই ডোজে দুই কোম্পানির টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের দেহে করোনা প্রতিরোধী উপাদানের উপস্থিতি বেশি।

রয়টার্সকে ম্যাথিউ স্ন্যাপ বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস- স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো, অর্থাৎ যেসব দেশের টিকাদান কর্মসূচিতে এখন পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হচ্ছে, তারা এই গবেষণার ফলাফলে উপকৃত হবে।’

এসএমডব্লিউ