Omicron: ওমিক্রন নিয়ে দ. আফ্রিকার বিজ্ঞানীদের নতুন হুঁশিয়ারি
সপ্তাহখানেক আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয় করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন। এরপরই তা অত্যন্ত দ্রুত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমণের বাইরে থাকা দেশগুলো ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়া রুখতে কার্যত সংগ্রাম করছে। এই পরিস্থিতিতে সর্বশেষ শনাক্ত ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে নতুন সতর্কবার্তা সামনে এনেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
আফ্রিকার এই দেশটির প্রধান প্রধান বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কেবল হালকা অসুস্থতা সৃষ্টি করছে এবং এখনই এই ভ্যারিয়েন্টকে বিশ্লেষণ করা হলে তা হবে খুবই তাড়াতাড়ি। বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে বর্তমানে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই যুবক ও অল্পবয়সী। যারা মূলত এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভালোভাবেই সক্ষম। আর তাই এখনই এই ধরনকে বিচার-বিশ্লেষণ করা খুবই কঠিন।
বুধবার এক অনুষ্ঠানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংস্পর্শে এসেই ব্যক্তিরা অসুস্থ হচ্ছেন না। কিছু সময় তারা ভাইরাস বহন করছেন এবং এরপরে গিয়ে তারা অসুস্থ হচ্ছেন।
অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ আফ্রিকায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে সাড়ে ৮ হাজারের বেশি মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের বেশিরভাগই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত।
দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কমিউনিকেবল ডিসিজেজ এর পাবলিক হেলথ সারভেইলেন্স অ্যান্ড রেসপন্সের প্রধান মিশেল গ্রুম বুধবার জানান, ‘দেশের এখন যারা করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই যুবক ও অল্পবয়সী। তবে এখন আমরা তুলনামূলক বেশি বয়সীদের মধ্যেও সংক্রমণ দেখছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বহু মানুষ করোনায় আক্রান্ত হলেও আমাদের প্রত্যাশা, আগামী কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত তারা আরও কঠিন কোনো জটিলতার সম্মুখীন হবেন না।’
গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপরই তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। একজন বিশেষজ্ঞ দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত করোনার বি.১.১.৫২৯ নামক এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এমনকি করোনার এই ধরন মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকেও আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গ্রিক বর্ণমালার ১৫ নম্বর অক্ষর অনুযায়ী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘ওমিক্রন’ নাম দেয়। পরে ওমিক্রন নিয়ে সৃষ্ট আতঙ্কে আফ্রিকার দেশগুলোর বিরুদ্ধে একে একে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করে বিশ্বের বহু দেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিস্প জেনোমিকস ইনস্টিটিউটের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড লেসেলস বলছেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংস্পর্শে আসার আগেই অনেক মানুষ ভাইরাসের অন্যান্য ধরনের সংস্পর্শে এসেছে এবং করোনা টিকা নিয়ে নিয়েছে। এতেই বহু মানুষের শরীরে কিছুটা হলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যকর রয়েছে। আর এই কারণে হয়তো ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েও কেউ গুরুতর অসুস্থ হচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘যদি ভাইরাস ও ভাইরাসের এই ধরন আরও বহুসংখ্যক মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তাহলে টিকা না নেওয়া এবং কার্যত গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকিতে থাকা অনিরাপদ জনসংখ্যাকে সহজেই খুঁজে বের বরতে পারে (ওমিক্রন)। যখন আমরা সাধারণ ভাবে এই (আফ্রিকা) মহাদেশের কথা চিন্তা করি, তখন তা আমাদের আরও বেশি উদ্বিগ্ন করে।’
চীন বা পশ্চিমা যেকোনো দেশের তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকায় টিকাদানের হার অনেক কম। কিন্তু আফ্রিকা মহাদেশের বেশিরভাগ দেশের তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকা অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। দেশটির মোট জনসংখ্যার চার ভাগের প্রায় এক ভাগ করোনা টিকার পূর্ণ ডোজ সম্পন্ন করেছেন।
অন্যদিকে আফ্রিকা মহাদেশের মোট ১৩০ কোটি মানুষের মধ্যে করোনা টিকার ডোজ সম্পন্ন করেছেন মাত্র ৬ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ। এছাড়া ১০ কোটি জনসংখ্যার মধ্য আফ্রিকার দেশ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে (ডিআর কঙ্গো) এখন পর্যন্ত শূন্য দশমিক ০১ (০.০১%) শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছেন।
এরপরও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড লেসেলস বলছেন, করোনার ওমিক্রন ধরন মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে তার আশা, ওমিক্রন মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে আক্রমণ করলেও টি-সেল কার্যকর থাকবে। টি-সেল মূলত মানবদেহের সংক্রমিত কোষগুলোকে মেরে ফেলে।
টিএম