দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে শনাক্ত হয়েছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। এরপরই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়েছে আতঙ্ক। এর মাঝেই এবার করোনার এই ভ্যারিয়েন্টের প্রথম ছবি প্রকাশিত হয়েছে। ইতালির রাজধানী রোমের বিখ্যাত ব্যামবিনো গেসু হাসপাতাল এই ছবি সামনে আনে।

এতে দেখা যাচ্ছে- ভারতে প্রথম শনাক্ত করোনার ডেল্টা ধরনের তুলনায় অনেক বেশি রূপবদল করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার শনাক্ত হওয়া ভাইরাসের সর্বশেষ ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। সোমবার (২৯ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

ব্যামবিনো গেসু হাসপাতালের প্রকাশিত করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের জিনগত গঠন সম্পর্কে গবেষকরা জানিয়েছেন, ‘ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের তুলনায় ওমিক্রন বহুবার মিউটেশন ঘটিয়েছে এবং জিনটির একটি জায়গাতেই সকল প্রোটিন ঘনীভূত হয়েছে, যেটি মানবদেহের কোষের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে।’

গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের বারবার নতুন রূপে ফিরে আসার অর্থ এটা নয় যে, এই ভ্যারিয়েন্টটি আরও ভয়ঙ্কর। তবে এই ভাইরাস অন্য রূপ বদল করে মানবদেহের সঙ্গে আরও অভিযোজিত হয়ে গেছে।

করোনাভাইরাসের নতুন অভিযোজিত রূপ ওমিক্রন কতটা ভয়ঙ্কর, সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত নন গবেষকরা। তাদের মতে, ‘এই অভিযোজন যদি নিরপেক্ষ হয়, তাহলে সেটা কম বিপজ্জনক নাকি বেশি বিপজ্জনক তা অন্য গবেষণায় জানা যাবে।’

মিলান স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক ও ব্যামবিনো গেসুর গবেষক ক্লাউডিয়া আলতেরি বলছেন, ‘গবেষক দল আপাতত মিউটেশনের ত্রিমাত্রিক স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশনের অনুসন্ধানের ওপরই গুরুত্ব আরোপ করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের যে ছবিটি প্রকাশিত হয়েছে, সেটির মাধ্যমে কেবল এই প্রজাতির অভিযোজনের সবগুলো বৈচিত্র্যের একটি নকশা ফুটে উঠেছে। তবে এটির ভূমিকা ওই ছবি বর্ণনা করছে না।’

অবশ্য ওমিক্রন কতটা ভয়ঙ্কর এবং মানবদেহে এর কী প্রভাব পড়ছে তা জানার জন্য আরও বাস্তবিক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন ক্লাউডিয়া আলতেরি। তার ভাষায়, ‘এই মিউটেশনের সংমিশ্রণ কতটা সংক্রামক অথবা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে কি না তা এখন উদাহরণস্বরূপ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে নির্ধারণ করাই জরুরি।’

গত বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপরই তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রিক বর্ণমালার ১৫ নম্বর অক্ষর অনুযায়ী এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘ওমিক্রন’ নামকরণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

রোববার (২৮ নভেম্বর) ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে দেওয়া আপডেটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, এক ব্যক্তির থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে সহজেই ওমিক্রন ভ্য়ারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়তে পারে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ আরও গুরুতর আকার ধারণ করে কি না, সেটিও এখনও জানা যায়নি।

ডব্লিউএইচও’র পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, বর্তমানে এমন কোনো তথ্য নেই, যা ওমিক্রনের উপসর্গকে বাকি ভ্যারিয়েন্ট থেকে আলাদা করে। প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ থেকে অনুমান করা হচ্ছে যে যারা আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের ফের ওমিক্রনে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রেও যতটা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেটিও অত্যন্ত সীমিত।

টিএম