জীবনের মাত্র দুই বছর পার করল চীনের ছোট্ট শিশু হাওইয়াং। হাতে আর খুব বেশি সময় নেই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হয়ত সামনের বছরটি নাও পেতে পারে দুরারোগ্য মেঙ্কস সিনড্রোমে আক্রান্ত এই খুদে প্রাণ। কারণ, এই রোগের চিকিৎসায় এখনও তেমন কোনো ওষুধ বের হয়নি। আর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়াও আটকে দিল করোনা।

এই অবস্থায় ছেলের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরি করতে মরিয়া হাওইয়াংয়ের বাবা জু ওয়েই। চিনের কুনমিং শহরের নিজ বাড়িতেই বানিয়ে ফেলেছেন গবেষণাগার। নিজেই ওষুধ তৈরি করে খাওয়াচ্ছেন ছেলেকে।

মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশের জন্য শরীরে কপার বা তামা জরুরি। তবে হাওইয়াং যে রোগে আক্রান্ত, তাতে এই কপার ঠিক মতো তৈরি করতে পারে না তার শরীর। ফলে তার বছর তিনের বেশি বাঁচা কঠিন বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ জু। শিক্ষাগত যোগ্যতা হাইস্কুল পর্যন্ত। হাওইয়াং অসুস্থ হওয়ার আগে অনলাইনে ছোট ব্যবসা চালাতেন জু। বর্তমানে তার ধ্যান-জ্ঞান এখন একটাই— ‘ছেলেকে লড়াইয়ের সুযোগটা অন্তত দিতে চাই।’

ছেলেকে কোলে নিয়ে জু বলেন, ‘আমার ছেলে নড়তে বা কথা বলতে পারে না ঠিকই। তবে ওর মধ্যে জীবন আছে, আবেগ আছে।’

বাড়িতেই গবেষণাগার বানানোর সিদ্ধান্ত নিলে কাউকে পাশে পাননি জু। তিনি বলেন, অনলাইনে মেঙ্কস সিন্ড্রোম নিয়ে যা তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল সবই ইংরেজিতে। অনুবাদ সফটওয়্যারের সাহায্যে তা পড়তে হত। যখন বুঝা গেল, ‘কপার হিস্টিডাইন’ ছেলের অবস্থা পরিবর্তনে সাহায্য করতে পারে। তখন দেরি না করে নিজের জিমেই ওষুধটি তৈরির প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম মজুত করে ফেলি।

এখন ছেলেকে বাড়িতে বানানো এই ওষুধটি খাওয়াচ্ছেন জু। তার দাবি, এই চিকিৎসা শুরুর দুই সপ্তাহ পর থেকে হাওইয়াংয়ের দুটি রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট ফের স্বাভাবিকে ফিরেছে। এখনও কথা না-বললেও গায়ে স্পর্শ করলে হাসি ফুটে উঠছে তার ঠোঁটে।

জু বলেন, ‘মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে দিতে পারি না ছেলেকে। ব্যর্থ হলেও আমি চাই আমার ছেলের মধ্যে আশাটুকু অন্তত বেঁচে থাকুক।’

এমএইচএস