ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) প্রধান মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) তিনি এ অভিযোগ করেছেন। জম্মু ও কাশ্মিরের হায়দারপোরায় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার কয়েকদিনের মাথায় টুইটারে এমন অভিযোগ জানালেন মেহবুবা মুফতি। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশ তার দলের প্রধান মুখপাত্র সুহেল বুখারী ও মুখপাত্র নাজমু সাকিবকে গ্রেফতার করেছে।

জম্মু ও কাশ্মিরের সাবেক এ মুখ্যমন্ত্রী টুইটারে তার বাড়ির তালা লাগানো দরজার ছবি পোস্ট করেছেন। পোস্ট করা একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বাড়ির বাইরে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি গাড়ি তার বাড়ির ওপর নজরদারি করছে।

আবারও গৃহবন্দি জানিয়ে তিনি লিখেছেন, সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা এবং পরবর্তীতে তাদের পরিবারকে যথাযথ দাফন থেকে বঞ্চিত করা সরকারের অমানবিকতার নতুন রূপ।

সোমবার (১৫ নভেম্বর) জম্মু ও কাশ্মিরের হায়দারপোরার বন্দুকযুদ্ধে হায়দারপোরায় একটি বাণিজ্যিক ভবনে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সংঘর্ষ হয়। সেখানে চার জন নিহত হয়েছেন। নিহত চার জনের নাম আলতাফ বাট, ডা. মুদাসির গুল, আমির মাগরে এবং হায়দার। আলতাফ ও মুদাসিরের পরিবার বলছে, তাদের সঙ্গে ওই সন্ত্রাসীর সম্পর্ক নেই। তারা সাধারণ মানুষ। পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের মরদেহ ফেরত চাওয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ তাদের সন্ত্রাসীর ‘সহযোগী’ হিসেবে উল্লেখ করছে।

কাশ্মির পুলিশের আইজি বিজয় বলেন, ‘গত রোববার শ্রীনগরের জামলতা এলাকায় গুলিতে আহত হন এক কনস্টেবল। সেই ঘটনায় হায়দার জড়িত। মুদাসির হায়দারকে সেখান থেকে হায়দারপোরায় নিয়ে আসার কাজেও জড়িত থাকতে পারেন।’

বিজয়ের দাবি, আলতাফ বাট দু’পক্ষের গুলির মধ্যে পড়ে নিহত হয়েছেন। তিনি বিচ্ছিন্তাবাদীদের গুলি না নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। তার ভাষায়, ‘হায়দরপোরার ওই ভবনে বসে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছিলেন। তাদের কাছ থেকে পিস্তল, ম্যাগাজিন ছাড়াও কম্পিউটার ও মোবাইল উদ্ধার হয়েছে।’

কিন্তু পুলিশের এই দাবি মানতে রাজি নন আলতাফ বাট ও ডা. মুদাসির গুলের পরিবারের সদস্যেরা। আলতাফের বড় মেয়ে জানান, ‘প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন- আমার বাবাকে নিয়ে সংঘর্ষের সময়ে তিন বার ওই ভবনে ঢুকেছিল নিরাপত্তা বাহিনী। দু’বার তাকে ফিরতে দেওয়া হয়। তৃতীয় বার তিনি নিহত হন।’

নিহত আলতাফের পরিবার বলছেন, তাকে ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করেছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী।

অন্যদিকে চিকিৎসক মুদাসির গুলের মা বলছেন, আমার ছেলে ডাক্তার। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল না। মুদাসিরের বোনের বক্তব্য, ‘বেশিরভাগ সময়েই দিল্লিতে থাকতেন মুদাসির। সোমবার জম্মু হয়ে এখানে এসেছিলেন তিনি। মুদাসিরের সম্পর্কে পুলিশ যা বলছে তা সত্য নয়।’

বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন কাশ্মিরের রাজনীতিকরাও। কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি জানিয়েছেন, ‘নিরীহ নাগরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পরে তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহযোগীর তকমা দেওয়া ভারত সরকারের নতুন কৌশল।’

অন্যদিকে ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ বলছেন, ‘এই সংঘর্ষ ও তাতে নিহত ব্যক্তিদের নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। অতীতে বহু বার সাজানো সংঘর্ষ হয়েছে। দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত করে এই সংঘর্ষ নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাব দেওয়া প্রয়োজন।’

এসএসএইচ