সৌদির কাছে ৫৫৭৭ কোটির অস্ত্র বিক্রি ঠেকাতে তৎপর মার্কিন সিনেটররা
সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত ঠেকাতে তৎপরতা শুরু করেছেন মার্কিন সিনেটররা। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর চলতি নভেম্বরের প্রথম দিকে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির কাছে প্রথমবারের মতো বড় অংকের অস্ত্র বিক্রির ঘোষণা দেয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন।
শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের সংশ্লিষ্টতার কারণে দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেন তিন জন মার্কিন সিনেটর।
বিজ্ঞাপন
চলতি নভেম্বর মাসের শুরুতে সৌদি আরবের কাছে প্রথমবারের মতো বড় অংকের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তির আওতায় সৌদিকে ৬৫ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষোপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে ওয়াশিংটন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে মধ্যপাল্লার এআইএম-১২০সি-৭/সি-৮ মডেলের আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সৌদি আরবের হাতে যাওয়ার কথা।
রয়টার্স বলছে, সৌদি আরবের কাছে ৬৫ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের এই ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি আটকাতে একটি যৌথ অসম্মতি প্রস্তাব এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান সিনেটর র্যান্ড পল এবং মাইক লি। এছাড়া ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সও এর সঙ্গে যুক্ত আছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবকে ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বলে সৌদি আরবকে অনেক মার্কিন আইনপ্রণেতা স্বীকৃতি দিলেও মূলত ইয়েমেন যুদ্ধে রিয়াদের জড়িত থাকার কারণে দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রির বিরোধিতা করছেন তারা। কারণ ছয় বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের কারণে ইয়েমেনে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হয়।
আর তাই ইয়েমেনে হামলা ও দেশটিতে সৃষ্ট মানবিক সংকটের কারণে মার্কিন রাজনীতিকরা রিয়াদের সমালোচনা করে আসছেন। এর আগে গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সৌদির কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করাসহ ইয়েমেন ইস্যুতে রিয়াদের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন জো বাইডেন।
বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না- এ নিশ্চয়তার দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র এতদিন সৌদি আরবের কাছে সামরিক ক্রয়-বিক্রয় স্থগিত রেখেছিল। তবে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন বা উন্নতি না হলেও এর কয়েক মাসের মাথায় অর্থাৎ নভেম্বরের শুরুতে ফের দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয় বাইডেন প্রশাসন।
সেসময় অবশ্য সিরিজ বেশ কয়েকটি টুইটে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ব্যুরো অব পলিটিক্যাল-মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স দাবি করেছিল যে, এই মিসাইলগুলো ভূমিতে হামলার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে না।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন দাবি করেছিল, সৌদি আরবের বর্তমান ও ভবিষ্যত হুমকি মোকাবিলায় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। প্রস্তাবিত এই অস্ত্র বিক্রি যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিমালার ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা বন্ধু দেশ সৌদি আরবের নিরাপত্তার উন্নতিতে এটি সহায়তা করবে।
এদিকে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের এই অনুমোদনের পর কংগ্রেসে এর আলাদা করে অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে আগেই জানিয়েছিল সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। তবে আইনপ্রণেতারা চাইলে সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে একটি অসম্মতি বিল পাস করিয়ে সৌদির কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকিয়ে দিতে পারেন।
টিএম