বহুজাতিক কোম্পানি ও ধনী ব্যক্তিদের কর ফাঁকির কারণে বাংলাদেশ প্রতি বছর ১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা (১৪৩ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন ডলার) হারাচ্ছে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য গ্লোবাল ট্যাক্স জাস্টিস ক্যাম্পেইনার্স নামের একটি সংস্থা।

কর ন্যায্যতাবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রচারণা সংস্থা মঙ্গলবার ‘দ্য স্টেট অব ট্যাক্স জাস্টিস ২০২১’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানেই উল্লেখ করা হয়েছে এই তথ্য।

এই কর রাজস্ব হারানোর ফলে বাংলাদেশের কতটা সামাজিক ক্ষতি হচ্ছে, তারও একটা হিসাব দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

এ বিষয়ে ‘দ্য স্টেট অব ট্যাক্স জাস্টিস ২০১১’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানি ও করদাতারা প্রতি বছর যে পরিমাণ কর ফাঁকি দেন, তা দিয়ে দেশের মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৮৪ লাখ মানুষকে অনায়াসে করোনা টিকার দুই ডোজ দেওয়া সম্ভব।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রতি বছর স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের সরকার যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করে, কর ফাঁকির এই অর্থ সেই বরাদ্দের ১৪ দশমিক ৫২ শতাংশ।

‘দ্য স্টেট অব ট্যাক্স জাস্টিস ২০১১’ অনুযায়ী, বাংলাদেশ বছরে যে প্রায় ১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ কর রাজস্ব হরাচ্ছে, তার মধ্যে ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের জন্য দায়ী বহুজাতিক করপোরেশন এবং ২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের জন্য ধনী ব্যক্তিরা।

বিদেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৭০ কোটি ডলার, যা বিদেশে থাকা মোট বৈশ্বিক সম্পদের দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।

এই অর্থ মোট জিডিপির দশমিক ৬ শতাংশ। নাগরিকদের বিদেশে রাখা এই সম্পদ থেকে বাংলাদেশ বছরে ২ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের কর রাজস্ব হারাচ্ছে বলে স্টেট অব ট্যাক্স জাস্টিস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কর রাজস্ব হারানোয় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এই তালিকায় ভারত (১৬৮৩ কোটি ডলার) ও পাকিস্তানের (৭৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার) প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

এছাড়া, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান যথাক্রমে ৭ কোটি ৭৯ লাখ ও ৫ কোটি ২ লাখ ডলার হারিয়েছে। তালিকায় এ দু’টি দেশের পরে আছে নেপাল (৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলার) ও ভুটান (২ কোটি ৭১ লাখ ডলার)।

মালদ্বীপে কর ফাঁকির প্রবণতা সবচেয়ে কম। ‘দ্য স্টেট অব ট্যাক্স জাস্টিস ২০২১’- প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কর ফাঁকিজনিত কারণে মালদ্বীপ প্রতি বছর হারাচ্ছে ৩১ লাখ ৯০ হাজার ডলার।

তবে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ দেশে করপোরেট কর ফাঁকির ঘটনা নেই বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বৈশ্বিক কর ফাঁকির কারণে দেশগুলো ৪ লাখ ৮৩ হাজার কোটি ডলারের কর রাজস্ব হারাচ্ছে, যা দিয়ে সারা বিশ্বের মানুষকে তিন বার করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া সম্ভব।

এসএমডব্লিউ