লেবাননের শিয়াপন্থী রাজনৈতিক দল হেজবুল্লাহকে অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন- এই অভিযোগে ১৮ সন্দেহভাজনকে আটক করেছে কুয়েতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কুয়েতের জাতীয় দৈনিক আল কাবাস ও আল রাইয়ের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

আল কাবাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- এই ১৮ সন্দেহভাজনকে আটকের নির্দেশ দিয়েছে কুয়েতের বিচারবিভাগ এবং আপাতত তাদেরকে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে।

পাশাপাশি, তাদের বিরুদ্ধে যে হেজবুল্লায় অর্থায়নের যে অভিযোগ এসেছে- তা ২১ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কুয়েতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। যতদিন তদন্ত শেষ না হয়, ততদিন কারাগারে থাকতে হবে এই ১৮ জনকে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কোনো মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্য করতে সম্মত হননি।

২০১৬ সালে লেবাননের প্রধান রাজনৈতিক দল এবং শিয়াপন্থী মুসলিমদের অন্যতম বৈশ্বিক সংগঠন হেজবুল্লাহকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে কুয়েত।

লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে শিয়াপন্থী হেজবুল্লাহর প্রভাব বাড়তে থাকায় মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় দেশগুলো লেবাননের বিষয়ে দিন দিন বিরূপ হয়ে উঠছে। ফলে, মধ্যপ্রাচ্যসহ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক প্রকার কূটনৈতিক সমস্যায় পড়েছে দেশটি।

মাস খানেক আগে ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনীর অভিযানের সমালোচনা করেছিলেন লেবাননের তথ্য মন্ত্রী জর্জ কোরদাহি। তার সমালোচনার পরপরই সৌদি আরব, কুয়েত ও বাহরাইন একযোগে নিজ নিজ দেশ থেকে লেবাননের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে, পাশাপাশি ওই দেশে নিযুক্ত নিজেদের দূত ফিরিয়ে আনে।

পরবর্তীতে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়- কেবল মন্ত্রীর সমালোচনার জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে- এমন নয়; বরং এটি ছিল লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ইরান সমর্থিত হেজবুল্লাহর ‘আধিপত্যের’ প্রতিবাদ।

দশকের পর দশক জুড়ে তিক্ত কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে সুন্নি মুসলিমদের আন্তর্জাতিক কেন্দ্র সৌদি আরব ও শিয়া মুসলিমদের বৈশ্বিক কেন্দ্র ইরান। গত কয়েক দশকে বিভিন্ন ইস্যুতে একাধিকবার সংঘাতও হয়েছে দু’দেশের মধ্যে।

মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই পরাশক্তির তিক্ত সম্পর্ক যেন বড় কোনো বিপর্যয় সৃষ্টি না করে, সেজন্য দীর্ঘদিন ধরে মধ্যস্থতা করেছে কুয়েত; কিন্তু ২০১৬ সালে কুয়েতের শিয়া সম্প্রদায়ের কয়েক জনের বিরুদ্ধে ইরান ও হেজবুল্লাহর হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় ইরানকে অভিযুক্ত করে কুয়েত, কিন্তু ইরান যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে। তারপর থেকেই ইরান ও ইরান সমর্থিত আন্তর্জাতিক দল ও গোষ্ঠীসমূহের বিষয়ে বিরূপ হয়ে ওঠে দেশটি।

এসএমডব্লিউ