অভিবাসীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দরজা বন্ধ রাখা জাপান শ্রমিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করায় অভিবাসন নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আরও অধিক সংখ্যক বিদেশিকে গ্রহণ করতে যাচ্ছে দেশটি।

বৃহস্পতিবার দেশটির বিচার মন্ত্রণালয় বলেছে, আগামী ২০২২ অর্থ-বছরের শুরুর দিকে নির্দিষ্ট কিছু চাকরিতে নিযুক্ত বিদেশিরা জাপানে অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকার অনুমতি পাবেন।

২০১৯ সালে কার্যকর হওয়া একটি আইন অনুযায়ী, কৃষি, নার্সিং এবং স্যানিটেশনের মতো ১৪টি খাতের ‘নির্দিষ্ট দক্ষ শ্রমিকদের’ জাপানি ভিসা দেওয়া হয়। তবে নির্মাণ ও জাহাজনির্মাণ খাত ছাড়া অন্য সব খাতের শ্রমিকদের জন্য পরিবারের সদস্যদের ছাড়াই পাঁচ বছরের ভিসা দেয় জাপান সরকার।

যে কারণে এ ধরনের শ্রমিকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো দ্বিধায় পড়ে যায়। দেশটির সরকার অন্যান্য খাতেও এসব বিধি-নিষেধ শিথিলে কাজ শুরু করেছে।

আইন সংস্কারের পর যদি তা কার্যকর হয়, তাহলে চীন এবং ভিয়েতনামের অনেক শ্রমিক তাদের ভিসার মেয়াদ অনির্দিষ্টকালের জন্য পুনর্নবায়ন এবং পরিবারের সদস্যদেরও জাপানে নিতে পারবেন।

জাপান সরকারের শীর্ষ মুখপাত্র হিরোকাজু মাৎসুনো বলেছেন, এ ধরনের যে কোনো পরিবর্তনের মানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি নয়। স্থায়ী বসবাসের অনুমতির জন্য ভিন্ন আবেদন প্রক্রিয়ার প্রয়োজন পড়বে।

দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসন বন্ধ থাকা জাপানে ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনগোষ্ঠীর বৃদ্ধির কারণে তীব্র শ্রমিক সংকট তৈরি হয়েছে। যে কারণে আবারও অভিবাসীদের জন্য সীমান্ত খুলে দিতে দেশটির সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।

জাপানের থিংকট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান জাপান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোশিহিরো মেনজু বলেছেন, ‘বয়স্ক জনগোষ্ঠী অত্যন্ত মারাত্মক সমস্যা হওয়ায় এবং জাপান যদি বিদেশী কর্মীদের জন্য একটি ভালো বিকল্প দেখাতে চায়, তাহলে তাদের স্বাগত জানানোর জন্য দেশে যথাযথ কাঠামো রয়েছে বলে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।’

দেশটির সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের অভিবাসীদের নিয়োগ সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়নের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩ লাখ ৪৫ হাজার ‘নির্দিষ্ট দক্ষ শ্রমিক’ জাপানে পাঁচ বছরের ভিসা পাবেন বলে জানানো হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রত্যেক মাসে প্রায় ৩ হাজার করে শ্রমিক দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। 

২০২০ সালের শেষের দিক পর্যন্ত জাপানে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ২০ হাজার। দেশটির মোট জনসংখ্যা সাড়ে ১২ কোটির কিছু বেশি হলেও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী আছে মাত্র আড়াই শতাংশ।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস