দুঃসময়ে পাশে নেই স্বজনরা, রিকশাচালককে সব সম্পত্তি দিলেন বৃদ্ধা
২০২০ সালে স্বামীকে হারান বৃদ্ধা মিনতি পট্টনায়েক। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মারা যান মেয়েও। নিঃসঙ্গতা গ্রাস করছিল তাকে। তার ওপর স্বামী-সন্তান হারানোর শোক তো ছিলই। জীবনের দুঃসময়ে কাছের মানুষ কে, তা চেনা যায়।
ভারতের উড়িষ্যার কটকের বাসিন্দা মিনতি পট্টনায়েক সেটা বুঝেছিলেন জীবনের প্রায় সায়াহ্নে এসে। চরম দুঃসময়ে। স্বামী-সন্তানকে হারিয়ে একা হয়ে যাওয়া বৃদ্ধার পাশে দাঁড়াননি কোনো আত্মীয়। তবে পরিচিত এক রিকশাচালক এই সময় তার ছায়াসঙ্গী হয়ে ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
সেই রিকশাচালকের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক ছিল না মিনতি পট্টনায়েকের। তবে রক্তের সম্পর্ক থাকলেই তো আর সব হয় না। মানুষ অনেক সময় জীবনে চলার পথে কাছের মানুষ খুঁজে পায়। রিকশাচালক বুদ্ধ শ্যামল ও তার পরিবার এই দুঃসময়ে বৃদ্ধা মিনতীর পাশে ছিলেন।
বুদ্ধ শ্যামলের রিকশায় চেপে মিনতি ও তার স্বামী যাতায়াত করতেন। সেই থেকেই পরিচয়। তবে সেই সামান্য পরিচয় কবে আত্মীয়তায় বদলেছে কেউই টের পাননি। নিজের পরিবারের সদস্যের মতো বৃদ্ধা মিনতিকে আগলে রেখেছিলেন সেই রিকশাচালক ও তার পরিবারের লোকজন।
সেই রিকশাচালকের নিঃস্বার্থ সেবায় আপ্লুত হন মিনতি। দুঃসময়ে আত্মীয়-স্বজনকে পাশে না পাওয়া বৃদ্ধা মিনতি নিজের বাড়ি, স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় এক কোটি টাকার সম্পত্তি লিখে দিলেন রিকশাচালক বুদ্ধ শ্যামলের নামে। রোববার (১৪ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং টাইমস নাউ।
সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিনতি পট্টনায়েক বলেছেন, ‘স্বামী ও মেয়েকে হারানোর পর সম্পত্তির কোনো মূল্য নেই। দুঃসময়ে আমি মানুষ চিনেছি। কাছের মানুষরা আমার জন্য যা করেনি, বুদ্ধ ও তার পরিবার করেছে। সজ্ঞানে তাকে সম্পত্তি লিখে দিলাম। আমার মৃত্যুর পর ওদের আর কোনো সমস্য়ায় পড়তে হবে না।’
তিনি আরও বলেন, আমার খারাপ সময়ে দিন-রাত এক করে বুদ্ধ ও তার পরিবার পাশে ছিল। তাদের সাধ্যের বাইরে গিয়েও আমার জন্য অনেক কিছু করেছে। তাই আমার এই সম্পত্তি ওদেরই প্রাপ্য।
রিকশাচালক বুদ্ধ বলেছেন, ‘আমি আগেও পট্টনায়েক পরিবারের পাশে ছিলাম। ভবিষ্যতেও থাকব। ওই পরিবারের সঙ্গে আমার ২৫ বছরের সম্পর্ক। আমি কিছু পাবো বলে মিনতিদেবীর পাশে দাঁড়াইনি। উনি আমাকে কিছু দেবেন, সেটি আশাও করিনি। আমার জন্য তিনি যেটা করলেন সেটি স্বপ্নেও ভাবিনি।’
টিএম